হাসিনার আগে জামায়াত ও খালেদা জিয়ার বিচার করতে হবে: শাজাহান খান

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকেন্দ্রিক রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানায় দায়ের করা হত্যা মামলায় সাবেক নৌ-পরিবহণমন্ত্রী শাজাহান খানের একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত।

বুধবার সকালে অন্যান্য আসামিদের সঙ্গে তাকে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সুষ্ঠু তদন্তের জন্য শাজাহান খানসহ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম এবং নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন। তিনি বলেন, “আসামিরা হত্যা মামলার এজাহারনামীয় আসামি। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য এবং অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করতে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।”

এ সময় শাজাহান খান আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এবং বলেন, “আমার হার্টে পাঁচটা ব্লক রয়েছে। আমি আন্দোলনের সময় চিকিৎসাধীন ছিলাম। প্রথম যখন আমাকে গ্রেফতার করে চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়, তখন দুই দিনের মাথায় আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছিল। আমি পিপি সাহেবের কথার উত্তর দেব না। তবে আমার অনুরোধ, শারীরিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে যদি জিজ্ঞাসাবাদ করতে হয়, তাহলে সেটা জেলগেটে করা যেতে পারে।”

তিনি আরও বলেন, “যদি মামলা করতে হয়, তাহলে গায়েবি মামলা না করে সুনির্দিষ্ট অভিযোগে মামলা করা উচিত।” এর পর কিছু আইনজীবী তাকে কটাক্ষ করে কথা বলেন।

এক পর্যায়ে সৈকত কথা বলতে চাইলে আদালতে উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। সৈকত জানান, “আন্দোলনের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো হত্যাকাণ্ড হয়নি।” এসময় আদালতে উপস্থিত আইনজীবীরা আবারও হৈচৈ শুরু করেন।

শাজাহান খান বিচারকের উদ্দেশে বলেন, “আপনার সামনেই আমাদেরকে যেভাবে থ্রেট দেওয়া হচ্ছে, আপনি এর বিচার করবেন।”

অতঃপর উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে মহানগর পিপি দাঁড়িয়ে বলেন, “আসামিদের উসকানিমূলক কথায় আদালতের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। আমি আদালতকে অনুরোধ করব, আসামিদের কথা বলার অনুমতি দেওয়ার ব্যাপারে আরও সচেতন থাকতে।”

শাজাহান খান পুনরায় বলেন, “আমাদের কথা বলাও যাবে না?”

এরপর ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাহবুবুর রহমানের আদালত শাজাহান খানের একদিন, আতিকুল ইসলামের এবং সৈকতের দুদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এজলাস থেকে হাজতখানায় নিয়ে যাওয়ার সময় শাজাহান খান আবারও বলেন, “শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যে অভিযোগের বিচার হচ্ছে, তার চেয়ে একাত্তরের অভিযোগ অনেক গুরুতর। লক্ষ লক্ষ মানুষকে হত্যায় জামায়াত জড়িত। জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু হত্যাসহ তিন হাজার সেনা কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিকে হত্যা করেছেন। এরশাদ সাহেবও হত্যা চালিয়েছে। খালেদা জিয়া দুবার ক্ষমতায় এসে হত্যাকাণ্ড করেছেন। তাদের বিচার আগে করতে হবে, তারপর শেখ হাসিনার বিচার।”

এ সময় তাকে প্রশ্ন করা হয়, “জুলাই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আপনি অনুতপ্ত কি না?” জবাবে শাজাহান খান বলেন, “অবশ্যই অনুতপ্ত।”

মামলার সূত্রে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় ১৯ জুলাই রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানাধীন এলাকায় পুলিশের গুলিতে মাদরাসা শিক্ষার্থী মো. আরিফ আহত হন। তাকে ঢাকা মেডিক্যাল হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এ ঘটনায় যাত্রাবাড়ী থানায় ২৩৩ জনকে এজাহারনামীয় আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *