‘ভারতকে ডমিনেট করতে বাংলাদেশকে খেলার মাঠ বানাতে চাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র: ইনু

‘ভারতকে ডমিনেট করতে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে খেলার মাঠ বানাতে চাচ্ছে’ বলে অভিযোগ করেছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু। তিনি বলেন, ‘দিল্লিকে আমেরিকা আর দোনামোনা খেলতে দেবে না। ক্লোজ এলাই হিসেবে পাশে চায়। না পেলে তারা ভারতের পার্শ্ববর্তী বন্ধু দেশ বাংলাদেশ মানে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করে তাদের পছন্দের পুতুল কাউকে ক্ষমতায় বসাতে চেষ্টা করবে।’

সোমবার (১৯ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে হাসানুল হক ইনু এসব কথা বলেন।

আমেরিকা যে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে নাক গলাতে শুরু করেছে, সেই দেশেই ধ্বংসযজ্ঞ শুরু হয়েছে, ইতিহাস সেটাই বলে- এমন অভিযোগ করে ইনু বলেন, রিসেন্ট সময়ে দেখছি হঠাৎ বাংলাদেশকে নিয়ে আমেরিকা অতি উৎসাহী হয়ে উঠেছে। নানা বিবৃতি দিচ্ছে। কিন্তু হঠাৎ আমেরিকার এত উৎসাহ কেন? তারা গণতন্ত্র টার্ম ইউজ করছে। পৃথিবীতে এমন একটি দেশের নাম কেউ বলতে পারবে না যেখানে আমেরিকা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে। বরং আমেরিকা যখন কোনও দেশের গণতন্ত্রের ব্যাপারে উৎসাহী হয়ে ওঠে, তখন সেই দেশের সরকার বা বিরোধী দলের চেয়ে জনগণের জন্য বেশি দুর্ভোগ বয়ে আনে। আমাদের এখন ভাবার সময় এসেছে আমেরিকার হঠাৎ এই অতি উৎসাহের হেতু কী? গণতন্ত্র নাকি সেন্টমার্টিন দ্বীপ?

জাসদ সভাপতি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র তাদের পুরোনো কৌশল প্রয়োগ করছে। সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে আঙুল বাঁকা করতে চেষ্টা করবে। দিল্লি তথা ভারতকে ডমিনেট করতে ভারতের বন্ধু দেশ বাংলাদেশকে প্রেসারাইজ করে ভারতকে কাবু করতে চেষ্টা করবে। দরকষাকষি হচ্ছে মূলত আমেরিকা আর ইন্ডিয়ার মধ্যে। পলিটিক্যাল জনগোষ্ঠী বাংলাদেশে খুবই ছোট। যা থেকে আমেরিকার খুব বেশি বেনিফিটেড হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই।

ইনু বলেন, ২০ হাজার মাইল দূরের কেউ এসে আমাদের দেশকে খেলার মাঠ বানাবে আমরা সেটা হতে দেবো না। আমরা দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা, কারও দানে পাওয়া নয়। স্বাধীন সার্বভৌম দেশ বাংলাদেশে সঠিক সময়ে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। এটাই মোদ্দা কথা।
তিনি বলেন, বিশ্বমোড়ল তাদের ভূ-রাজনৈতিক সামরিক স্বার্থে রাশিয়ার কাঁধে ইউক্রেন যুদ্ধ চাপিয়েছে। চীনের কাঁধে তাইওয়ান যুদ্ধ চাপানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে। সুতরাং বিএনপি-জামায়াত যারা নিজেরা নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে না পেরে বিদেশি বিভিন্ন মহলের কাছে গিয়ে ধরনা দিয়ে খাল কেটে কুমির আনছে, তারা দেশের শত্রু, জনগণের শত্রু, গণতন্ত্রের শত্রু।

বিএনপির সঙ্গে আলোচনার ইস্যুতে মন্ত্রীদের পরস্পরবিরোধী বক্তব্যের কথা তুলে ধরে ইনু বলেন, সরকারের মন্ত্রী, এমপিরা কী বলছেন? কী করছেন? তা সরকারের পক্ষ থেকে তদারকি থাকা জরুরি প্রয়োজন নয় কি?

ইনু বলেন, কয়লার বিল বাকি ৪ হাজার কোটি টাকা। বিমান সংস্থার বাকি ২১ হাজার ডলার। সরকারি প্রতিষ্ঠানের বাকি ১৭ হাজার কোটি টাকা। আমার প্রশ্ন হচ্ছে এত বাকি কেন? কীভাবে? দেশটার মধ্যে কি ব্যাড়াছ্যাড়া লেগে আছে!

তিনি বলেন, যেকোনও মূল্যে নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতা ধরে রাখতে হবে। বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রাখতে হবে। বাজারে দ্রব্যমূলের ঊর্ধ্বগতির জন্য সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে। কতিপয় ব্যবসায়ীর কাছে কি সরকার, প্রশাসন এবং সাধারণ মানুষ জিম্মি?

কুইক রেন্টাল সরকার জরুরি ভিত্তিতে করেছিল উল্লেখ করে ১৪ দলীয় জোটের এই সদস্য বলেন, যখন অন্য বিদ্যুৎকেন্দ্র আসা শুরু করলো তখন এদের বসিয়ে রেখে ১০ বছরে ৯০ হাজার কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ কেন দেবেন। তিনি বলেন, দেশের কতিপয় শীর্ষ কোম্পানিকে গত ৯ মাসে কুইক রেন্টাল কনসেপ্টের ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়া হয়েছে ১৭ হাজার কোটি টাকা।

ইনু বলেন, ২০২৩-এর ডিসেম্বরের শেষে নির্বাচন। কতিপয় বিদেশি মহল নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ঘোঁট পাকাচ্ছে। আর বিএনপি-জামায়াত ও তাদের সঙ্গীদের ভাব দেখে মনে হচ্ছে, তারা নির্বাচনের আগেই ক্ষমতার প্রশ্ন ফয়সালা করতে চায়। বিএনপির প্রতি আমার আহ্বান, নির্বাচনের ট্রেনে উঠুন, আর না হয় কলার ভেলায় চড়ে সাগরে ভেসে যাবেন।

বিএনপিকে উদ্দেশ করে ক্ষমতাসীন জোটের শরিক দলের এই সদস্য বলেন, বাংলাদেশে আর ‘৭৫ বা ‘৮২ বা ১/১১-এর মতো ভূতের সরকার, সামরিক সরকার হবে না। ওই আশায় বসে না থেকে নির্বাচনি ট্রেনে উঠে পড়ুন। দেশকে সাংবিধানিক ধারায় চলতে সাহায্য করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *