কুষ্টিয়ায় চালকল মালিক সমিতির সভাপতি ও ব্যবসায়ী আবদুর রশিদের বাড়ি লক্ষ্য করে গুলি ছুড়েছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল বুধবার দুপুর পৌনে দুইটার দিকে শহরের গোশালা সড়কে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার সময় আবদুর রশিদ খাজানগর এলাকায় নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ছিলেন। খবর শুনে তিনি বাড়িতে যান। আবদুর রশিদ বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি। সদর উপজেলার খাজানগর এলাকায় তাঁর বড় কয়েকটি চালকল আছে।
ঘটনার পর তিনি নিজ বাড়িতে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, তাঁর ভাতিজা সম্প্রতি সদর উপজেলার একটি পশুহাটের ইজারা পেয়েছেন। সেই ইজারা প্রত্যাহারের জন্য বিএনপির এক নেতা বিপ্লব চরমপন্থী সংগঠনের নেতাদের দিয়ে এই ঘটনা ঘটিয়েছে। এর আগে মোবাইল ফোনে তাকে এবং তাঁর ভাতিজাকে হুমকিও দেওয়া হয়েছিল বলে দাবি করেন তিনি।’ গুলির ঘটনার পর পুলিশ ও র্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তাঁরা গুলির খোসাও জব্দ করে নিয়ে যান। দিনদুপুরে লোকজনের মধ্যে এ ঘটনার পর এলাকা জুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। আবাসিক এলাকা হওয়ায় প্রচুর লোকজন জড়ো হয়ে যায়।
পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দা সূত্র জানায়, গোশালা সড়কের প্রবেশ মুখে কয়েকটি বাড়ির পরেই রশিদের অত্যাধুনিক ডুপলেক্স বাড়ি। বাড়িটি এখনও পূর্ণঙ্গ নির্মাণ হয়নি। এরমধ্যে দোতলাতে তিনি পরিবার নিয়ে বাস করছেন। ঘটনার সময় বাড়িতে রশিদের স্ত্রী,সন্তান ও সন্তানের স্ত্রী ছিলেন।
বিকেল ৫টার দিকে বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় র্যাব ও পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা বাড়িতে রশিদের সঙ্গে কথা বলছেন। ঘটনাস্থল ঘুরে দেখছেন এবং তথ্য সংগ্রহ করছেন। কথা হলে আবদুল রশিদের ছেলে শাহরিয়ার রশিদ বলেন, দুপুরের দিকে তিনি বাড়িতেই ছিলেন। নামাজ আদায় করছিলেন। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যাবার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। হঠাৎ একটি বিকট শব্দ শুনতে পান। নিচ থেকে বাড়ির দারোয়ান গুলি ছোড়ার বিষয়টি জানায়। পরে দেখা যায় তৃতীয়তলার গ্লাসে ভেদ করে গুলি ভেতরে চলে যায়। গ্লাসের টুকরো নিচে ও আশেপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে। তিনি আরও বলেন,‘বিষয়টি সাথে সাথে বাবাকে জানান। এবং পুলিশকেও ফোন করেন। এরপর পুলিশ, ডিবি ও র্যাবের টিম বাড়িতে আসে।
বাড়ির সামনে থাকা একটি সিসি ক্যামেরার ফুটেজে ধারণ করা ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, দুপুর ১টা ৪০ মিনিটের দিকে একটি মোটরসাইকেলে দুজন ব্যক্তি আসেন। তাদের দুজনের মুখে সার্জিক্যাল মাস্ক ও মাথায় হেলমেট পরা। বাড়ির সামনে দাড়ানোর অন্তত ১০ সেকেন্ড পর পেছনে বসে থাকা এক ব্যক্তি বাড়ি লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। এরপর শহরের দিকে চলে যান। এই সময়ে সড়কে মানুষ চলাচলও করছিল।
আবদুর রশিদ সাংবাদিকদের জানান, তিনি ও তার পরিবার দীর্ঘদিন ধরে চাল ব্যবসার পাশাপাশি হাটবাজার ইজারা নেবার ব্যবসা করেন। কয়েকদিন আগে ১ কোটি ৬২ লাখ টাকায় কুষ্টিয়া সদর উপজেলার আইলচারা পশুহাটের ইজারা পান তাঁর ভাতিজা জিহাদুজ্জামান জিকু। এই হাটের দরপত্র কেনার পর থেকেই একটি চরমপন্থী সংগঠনের নেতা পরিচয় দিয়ে ইজারাপত্র জমা না দিতে হুমকি দিয়ে আসছিল। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আবারও ওই চরমপন্থী নেতা স্বপন ঠাকুর পরিচয় দিয়ে হুমকি দেয়। স্বপন নামের ওই ব্যাক্তি হুমকি দিয়ে বলে,বিএনপি নেতা জাহিদুল ইসলাম বিপ্লব ও মুন্না নামে দুজন এই হাট পরিচালনা করবে। এজন্য ইজারা প্রত্যাহার করে নিতে হবে। না হলে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। হুমকি পাবার পর থেকে রশিদের ভাতিজা খাজানগর এলাকার গোল্ডেন অটো রাইস মিলের মালিক জিহাদুজ্জামান আত্নগোপনে রয়েছে। বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির কুষ্টিয়া শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা যুবদলের সাবেক শিল্পবিষয়ক সম্পাদকও তিনি।
জিকুর সাথে মোবাইলে কথা হলে বলেন,‘ কয়েকদিন আগে কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় একটি হাট ইজারা পেয়েছেন। এই হাটের দরপত্রে অংশ না নিতে হুমকি দেয়া হয়। এবং সর্বোচ্চ দরদাতা হিসাবে হাট ইজারা পাবার পরও হুমকি বেড়ে যায়। এই হুমকির সাথে চরমপন্থী ও বিএনপির দলীয় কয়েকজন লোকজন জড়িত। নেপথ্যে থেকে বিএনপি নেতা বিপ্লবও এ কাজ করছে বলে তারা ধারনা করছেন।’ এব্যাপারে কুষ্টিয়া সদর উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব জাহিদুল ইসলাম বিপ্লবের সাথে মোবাইলে কথা হলে বলেন,‘ রশিদ সাহেব আর আমার বাড়ি একই এলাকায়। এলাকায় রশিদদের সাথে কিছু বিষয়ে মতপ্রার্থক্য রয়েছে। এসব ঘটনার সাথে আমি বিন্দ্রমাত্র সংশ্লিষ্ট নই। আইনশৃঙ্খলাবাহিনী তদন্ত করতে পারে।’ চলতি মৌসুমেও এই হাটের দরপত্র কিনেছিলাম। চরমপন্থীরা আমাকেও অংশ না নিতে হুমকি দিয়েছিল। এজন্য আর এগোয়নি। আমি বিএনপির রাজনীতি করি। আমাকে হেয় করতে ও কালিমা লেপন করতে আমার নাম আনা হচ্ছে।’
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কুতুব উদ্দিন বলেন, প্রকাশ্যে দিনের বেলায় যে ঘটনা ঘটেছে তা আতঙ্কের বিষয়। তবে যে বা যারা পরিচয় দিয়ে হুমকি দিয়েছে সঠিক তদন্তের মাধ্যমে খুঁজে বের করতে হবে।যাদের নাম ব্যবহার করা হচ্ছে কেউ তো ফাঁসানোর জন্যেও করতে পারে। সব বিষয়ই দ্রুত আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে উদ্ঘাটন করার দাবি জানান।
কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘গুলি বর্ষনের ঘটনা ঘটেছে। গুলির খোসা জব্দ করা হয়েছে। গুলিটি ভবনের তৃতীয় তলার কাচ ভেদ করেছে। তবে ওই তলায় কোনো বাসিন্দা থাকে না। পুরো বিষয়টি নিয়ে পুলিশের একাধিক দল ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে। মামলার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।’
বার্তাবাজার/এসএইচ