বর্তমান বিশ্বে ইসরাইল ও ভারতের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য কৌশলগত সম্পর্ক গড়ে উঠেছে যা কেবল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উভয় দেশের কর্মকাণ্ড বিশ্লেষণ করলে একটি উদ্বেগজনক মিল চোখে পড়ে – উভয় রাষ্ট্রই তাদের সংখ্যালঘু মুসলিম জনগোষ্ঠীর প্রতি ক্রমবর্ধমান বৈরী আচরণ করছে। গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর নির্মম হামলা এবং ভারতে মুসলিমদের বিরুদ্ধে সংঘটিত সহিংসতার মধ্যে একটি ভয়াবহ সাদৃশ্য লক্ষণীয়।
গাজায় ইসরাইলি হামলায় ব্যবহৃত অস্ত্রে ‘মেইড ইন ইন্ডিয়া’ লেখা পাওয়ার খবর আন্তর্জাতিক মহলে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ভারতীয় কোম্পানি প্রিমিয়ার এক্সপ্লোসিভ লিমিটেড কর্তৃক ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর জন্য সলিড প্রোপেল্যান্ট সরবরাহের তথ্য নিশ্চিত হওয়ার পর থেকে প্রশ্ন উঠেছে ভারতের প্রকৃত অবস্থান নিয়ে। অন্যদিকে, ভারতে মুসলিমদের বিরুদ্ধে সরকারি মদদে সংঘটিত সহিংসতা, মসজিদ ভাঙার ঘটনা এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বেড়ে চলেছে।
৭ এপ্রিল ২০২৪-এ ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে বিশ্বব্যাপী আয়োজিত হরতালে ভারতের অনন্য প্রতিক্রিয়া বিশ্ববাসীকে হতবাক করেছে। যখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষ ইসরাইলি বর্বরতার বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছিল, ভারতে উল্টো চিত্র দেখা গেছে। সেখানে জনগণ ইসরাইলের পক্ষে মিছিল করেছে, ফিলিস্তিনি পতাকা প্রদর্শনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গাজায় নিহত শিশুদের নিয়ে অমানবিক মিম তৈরি করে ভারতীয় ব্যবহারকারীরা আলোচনায় এসেছেন।
ভারতের অভ্যন্তরীণ নীতিও সমানভাবে উদ্বেগজনক। সম্প্রতি পাস হওয়া বিতর্কিত ওয়াকফ আইন মুসলিম সম্প্রদায়ের সম্পত্তি হস্তান্তরের পথ সুগম করেছে। গরু কোরবানির অজুহাতে মুসলিম নিধন, ধর্মীয় উৎসবে বাধা প্রদান এবং মসজিদ ভাঙার ঘটনাগুলো এখন নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এই সমস্ত ঘটনা ইসরাইলের ফিলিস্তিনি নীতির সঙ্গে আশ্চর্য রকমের মিল প্রদর্শন করে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইসরাইল ও ভারতের মধ্যে গড়ে উঠা এই সম্পর্ক কেবল কূটনৈতিক বা অর্থনৈতিক সহযোগিতার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। উভয় দেশই তাদের সংখ্যালঘু মুসলিম জনগোষ্ঠীর প্রতি একই রকমের দমননীতি অনুসরণ করছে। ইসরাইল ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে যে নীতি গ্রহণ করেছে, ভারতও তার অভ্যন্তরীণ মুসলিম জনগোষ্ঠীর প্রতি অনুরূপ আচরণ করছে। এই সমান্তরাল নীতিগুলো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই অবস্থায় বিশ্ব সম্প্রদায়ের উচিত উভয় দেশের এই ধরনের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া। মানবাধিকার লঙ্ঘনের এই ধারা যদি এখনই রোধ না করা হয়, তাহলে ভবিষ্যতে এর পরিণতি আরও ভয়াবহ হবে বলে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন। মুসলিম জনগোষ্ঠীর প্রতি এই বৈষম্যমূলক আচরণ বিশ্ব শান্তির পথে একটি বড় বাধা হিসেবে কাজ করছে, যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জরুরি হস্তক্ষেপ দাবি করে।
বার্তাবাজার/এসএইচ