ট্রানজিট নিয়ে ভারতের দাদাগিরি, উচিত জবাব দেবে বাংলাদেশ!

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দীর্ঘদিনের কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক বর্তমানে নতুন এক সংকটের মুখোমুখি হয়েছে। সম্প্রতি ব্যাংককে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুস ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বৈঠক শেষে আশার আলো দেখা গিয়েছিল। কিন্তু বৈঠকের মাত্র চার দিন পরই ভারত বাংলাদেশকে দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে দুদেশের সম্পর্কে নতুন করে বরফ জমিয়ে দিয়েছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে বাংলাদেশের পণ্য নেপাল ও ভুটানে পাঠানোর পথ বন্ধ হয়ে গেছে। ভারতের সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ইনডাইরেক্ট ট্যাক্সেস অ্যান্ড কাস্টমস (CBIC) এই আদেশ জারি করার পর থেকেই প্রশ্ন উঠেছে, বাংলাদেশ এখন কী পাল্টা পদক্ষেপ নেবে?

এখানে একটি বৈপরীত্য দেখা যাচ্ছে। ভারত বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহারের ব্যাপক সুবিধা ভোগ করছে, যা তাদের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অর্থনীতিতে গতি এনেছে। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শংকর স্বীকার করেছিলেন যে, বাংলাদেশের বন্দর ব্যবহারের অনুমতি ভারতের জন্য একটি বড় অর্জন। অথচ একই সময়ে বাংলাদেশের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা কেড়ে নেওয়া হলে তা ন্যায্যতা হারায়। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ভারতকে এই বন্দর সুবিধা দিলেও তা গোপনে করা হয়েছিল, যা পরে প্রকাশ পায়। এখন এই অসম চুক্তিগুলো পুনর্বিবেচনার দাবি উঠতে পারে।

২০২৪ সালের জুনে শেখ হাসিনার ভারত সফরকালে স্বাক্ষরিত রেল ট্রানজিট চুক্তি ছিল একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এই চুক্তি অনুযায়ী, ভারত বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে কলকাতা থেকে আগরতলা পর্যন্ত রেলপথ সংক্ষিপ্ত করতে পারত। বর্তমানে এই পথে ১,৬০০ কিলোমিটার পাড়ি দিতে ৩৬ ঘন্টা লাগলেও বাংলাদেশের মাধ্যমে মাত্র ৫৫০ কিলোমিটার পথে ১২ ঘন্টায় যাতায়াত সম্ভব হতো। কিন্তু শেখ হাসিনার পতন ও সরকার পরিবর্তনের পর এই প্রকল্পটি থমকে যায়। যদিও চুক্তিটি আনুষ্ঠানিকভাবে বাতিল হয়নি, তবে বাস্তবায়নের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

ভারতের একতরফা সিদ্ধান্তের জবাবে বাংলাদেশ নানা ধরনের কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক পদক্ষেপ নিতে পারে। প্রথমত, বাংলাদেশ ভারতকে দেওয়া বন্দর ব্যবহারের সুবিধা প্রত্যাহার করতে পারে। দ্বিতীয়ত, রেল ট্রানজিট চুক্তি স্থগিত বা বাতিল করা যেতে পারে। তৃতীয়ত, বাণিজ্য ও কাস্টমস নীতিতে কঠোর শর্ত আরোপ করা সম্ভব। তবে এসব পদক্ষেপ নেওয়ার আগে দুদেশের মধ্যে কূটনৈতিক আলোচনা জরুরি, যাতে সম্পর্কের ক্ষতি না হয়।

বর্তমান পরিস্থিতিতে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্কের গতিপথ অনিশ্চিত। ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলের মতো সিদ্ধান্ত দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক সম্পর্কে নতুন টানাপড়েন তৈরি করেছে। এখন দেখার বিষয়, বাংলাদেশ কীভাবে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে এবং ভারতের সাথে নতুন করে আলোচনার টেবিলে বসে। উভয় দেশের জন্য সমঝোতা ও সহযোগিতার ভিত্তিতে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়াই হবে সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ। অন্যথায়, এই সংকট আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাকে প্রভাবিত করতে পারে।

 

বার্তাবাজার/এসএইচ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *