নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের প্রান্তিক জনপদ

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার পদ্মা নদী-বেষ্টিত চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের চরাঞ্চলের সাধারণ মানুষ যুগ যুগ ধরে জীবন ও জীবিকার তাগিদে বসবাস করে আসছেন। কিন্তু স্বাধীনতার এত বছর পরও তারা নাগরিক জীবনের মৌলিক সুবিধাগুলো থেকে বঞ্চিত রয়ে গেছেন।

উপজেলা সদর থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন এই চরাঞ্চলে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার চিত্র একেবারেই নাজুক। খানাখন্দে ভরা কাঁচা রাস্তাগুলোর বেশিরভাগই দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারবিহীন। কোথাও কোথাও কালভার্ট বা ব্রিজেরও অভাব রয়েছে। ফলে কৃষকরা সময়মতো তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারে পৌঁছাতে পারেন না। এতে করে তারা ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হন। দূর্গম চিলমারী চরের কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, “আমাদের সবজি খুব ভালো হয়, কিন্তু সময়মতো বাজারে নিতে পারি না। একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তায় কাদা আর পানি জমে থাকে। তখন ব্যাপারীদের কাছে কমদামে বিক্রি করতে বাধ্য হই।”

চরাঞ্চলের শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাদামাটি ও ধুলোবালির পথ পেরিয়ে স্কুলে যায়। বর্ষাকালে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে। চিলমারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ইকবাল হোসেন জানান, “বৃষ্টির সময় শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি প্রায় অর্ধেকে নেমে আসে। বিশেষ করে মেয়েরা পড়াশোনার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়।” স্বাস্থ্যসেবার চিত্রও হতাশাজনক। জরুরি অবস্থায় রোগীকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পৌঁছাতে সময় লাগে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। গর্ভবতী নারী বা আশঙ্কাজনক রোগীরা মাঝপথেই মৃত্যুর ঝুঁকিতে পড়েন। সড়কের এমন অবস্থা যে অ্যাম্বুলেন্স সেবা এখানে কল্পনারও অতীত।

চরাঞ্চলের মানুষ চান, ভাগজোত ও সুকারঘাট এলাকার রাস্তাগুলি দ্রুত পাকা করা হোক এবং প্রয়োজনীয় ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ করা হোক। এতে করে কৃষক, শিক্ষার্থী ও রোগীরা সময়মতো মৌলিক সেবা পেতে পারবে। চিলমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী আব্দুল মান্নান জানান, “আমরা একাধিকবার উন্নয়ন প্রকল্পের প্রস্তাব জমা দিয়েছি। কিছু কাজ শুরু হলেও বাজেট সংকটে তা বন্ধ হয়ে যায়। টেকসই পরিকল্পনা ছাড়া এসব সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়।”

এ বিষয়ে দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল হাই সিদ্দিকী বলেন, “ভাগজোত বাজার থেকে শুকারঘাট পর্যন্ত রাস্তা এবং ভাগজোত মোড়ের নিচে পদ্মা নদীতে একটি ব্রিজ নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্পটি একনেকে পাস হলেই রাস্তার নির্মাণকাজ শুরু হবে।” তিনি আরও জানান, “চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের মানুষ শিগগিরই উন্নয়নের সুফল পাবেন। এই দুটি ইউনিয়নকে মডেল ইউনিয়ন হিসেবে গড়ে তোলা হবে।”

চরাঞ্চলের মানুষ মনে করেন, এখন আর আশ্বাস নয়, প্রয়োজন বাস্তবায়ন। তারা চান, তাদের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে বিশেষ পরিকল্পনার মাধ্যমে চরাঞ্চলকে মূলধারার উন্নয়নের সঙ্গে যুক্ত করা হোক। যাতে করে দেশের এই প্রান্তিক জনগোষ্ঠীও পেতে পারে তাদের ন্যায্য অধিকার ও মৌলিক সেবা।

 

বার্তাবাজার/এসএইচ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *