নেতাকর্মীদের ভারত সীমান্তে জড়ো করে আ’লীগ নেতার কান্নাকাটির কর্মসূচি

লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা সীমান্তে আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে গুজব ছড়িয়ে ও দলের শত শত নেতাকর্মীদের সীমান্তে জড়ো কান্নাকাটির কর্মসূচি পালনের অভিযোগ উঠেছে। গোপন ক্ষুদে বার্তা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কৌশলে ‘ভারতীয় নেতারা সীমান্তে এসে হিন্দুদের সাথে কথা বলবেন, ভিডিও করে আন্তর্জাতিক ও ভারতীয় মিডিয়ায় প্রচার করা হবে এবং ভারতে নেয়ার ব্যবস্থা করবেন’ এমন গুজব ছড়িয়ে দেয়া হয়।

শুক্রবার (৯ আগস্ট) বিকেলে হাতীবান্ধা উপজেলার গোতামারী ইউনিয়নের উত্তর গোতামারী সীমান্তে শত শত হিন্দু ধর্মালম্বীরা বিভিন্ন এলাকা থেকে ছুটে আসেন।

বিভিন্ন সূত্রে অভিযোগ উঠেছে, ওই এলাকায় হাতিবান্ধা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান হোসেন বাচ্চুর শ্বশুরবাড়ি। সরকার পতনের দিন থেকে তিনি ওই এলাকায় অবস্থান করছেন। বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায় নিযার্তনের শিকার হচ্ছে এমন খবর ভারতীয় মিডিয়ার নজরে আনার কৌশল হিসেবে তিনি গুজব ছড়িয়ে সীমান্তে হিন্দু সম্প্রদয়ের লোকজনকে জড়ো করেছেন। এছাড়াও ওই এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের ওপর হামলা হচ্ছে- এমন দাবি তুলে বৃহস্পতিবার তার লোকজন দিয়ে তিনি মানববন্ধনেরও চেষ্টা করেন।

পরে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্ল্যাহ ও পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলামসহ বিএনপি-জামায়াতের স্থানীয় নেতারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে হিন্দু সম্প্রাদায়ের লোকজনের সাথে কথা বলে বুঝিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন।

গোতামারী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কাশেম মিয়া বলেন, ‘দলে দলে লোকজন সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ার দিকে যাচ্ছে। তাদের সাথে কথা বললে তারা জানান, ভারতীয় নেতারা কাঁটাতারের বেড়ার কাছে এসেছে বাংলাদেশী নির্যাতিত হিন্দুদের সাথে কথা বলবেন। সে কারণে তারা এসেছেন, কিন্তু ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি পুরোটা গুজব। ভারতীয় বিএসএফ ছাড়া কেউ ছিলনা সেখানে।’
পার্শ্ববতী নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলা থেকে আসা পরশ চন্দ্র জানান, ফেসবুকের মাধ্যমে তিনি জানতে পেয়েছে এই সীমান্তে ভারতীয় নেতারা সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ার কাছে আসবেন, বাংলাদেশে নির্যাতিত হিন্দু সম্প্রাদায়ের লোকজনের সাথে কথা বলবেন। তাই তারা এসেছেন।

হাতীবান্ধা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি লিয়াকত হোসেন বাচ্চুর সাথে এ বিষয়ে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি।

তবে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও গোতামারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোনাবেরুল ইসলাম মোনা বলেন, ‘সকাল থেকে হিন্দু সম্প্রাদায়ের লোকজন দলে দলে জড়ো হন। তারা কী কারণে জড়ো হন তা কিছুই জানে না। তারাও বলছে না। তিনি তাদের চলে যেতে বললে তারা চড়াও হন।’

বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও হাতিবান্ধা উপজেলার বাসিন্দা ব্যারিস্টার হাসান বলেন, ‘খবর শুনেই ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের সাথে কথা বলি। তারা সীমান্ত এলাকায় কেন এসেছেন তার সঠিক উত্তর দিতে পারেননি। পরে আমরা সব মানুষকে বুঝিয়ে নিজ বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছি।’

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্ল্যাহ বলেন, ‘ তাদের সাথে কথা বলেছি। তারা নিদিষ্ট করে তাদের অভিযোগ বলতে পারেনি। কিন্তু বলছেন, তারা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। পরে তাদের বুঝিয়ে বাড়িতে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *