উখিয়ায় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে সংবাদ বিএনপি নেতার সংবাদ সম্মেলন

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার রত্নাপালং ইউনিয়নের টেকপাড়া গ্রামে মরহুম বাদশা মিয়া চৌধুরীর পৈত্রিক সম্পত্তি জবর-দখল ও চাঁদা দাবির অভিযোগ নিয়ে ফের উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। এই নিয়ে উখিয়ায় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বিএনপির সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও রত্না পালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী মাহফুজ উদ্দিন বাবু।

বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) দুপুরে একটি উখিয়ার কোটবাজারস্থ একটি হলরুমে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সংবাদ সম্মেলন আরও উপস্থিত ছিলেন রত্নাপালং ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নং ওয়ার্ডের মেম্বার নেজাম উদ্দিন দুলাল, ৬ নং ওয়ার্ডের মেম্বার মাহামুদুর হক ও বিশিষ্ট সমাজ সেবক মোরশেদ আলম চৌধুরী সহ স্থানীয় গণ্যমান্যব্যক্তিবর্গ। তারা জসিম আজাদ কর্তৃক সাজানো ও ‘পূর্ব পরিকল্পিত অপপ্রচার’ বলে উল্লেখ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে মাহফুজ উদ্দিন বাবু অভিযোগ করে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে এবং সংবাদ কর্মী পরিচয় দিয়ে জসিম আজাদ গত পাঁচ বছর ধরে মরহুম বাদশা মিয়া চৌধুরীর খতিয়ানভুক্ত সম্পত্তি জবর-দখল করে রেখেছেন। অথচ সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল কবির চৌধুরীর নেতৃত্বে শালিসি বৈঠকে জমির কাগজপত্র দেখে বাদশা মিয়ার পরিবারের পক্ষেই রায় হয়েছিল। সেই রায় এখনো বহাল আছে।’

তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করার জন্য জসিম আজাদ কাজ করছেন। গত কয়েক দিন আগে মরহুম বাদশা মিয়া চৌধুরীর ছেলে তাইমুন উদ্দিন চৌধুরী ওই পৈত্রিক সম্পত্তিতে টিনের ঘেরা দিয়ে দখল নেন। আমি তখন ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলাম না। এরপর জসিম আজাদ বিভিন্ন অনলাইন ও প্রিন্ট মিডিয়ায় মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দেন যে আমি ওই জমি দখলে নেতৃত্ব দিয়েছি এবং পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছি। আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং মানহানি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

চাঁদাবাজির অভিযোগে অভিযুক্ত করে বিভিন্ন বিভিন্ন পত্রিকা, অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যামে প্রকাশিত মিথ্যা সংবাদের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বাবু বলেন, গত ৯ এপ্রিল বিভিন্ন পত্রপত্রিকা,অনলাইন গণমাধ্যমে ‘উখিয়ায় সাংবাদিকের বাড়ি দখলের চেষ্টা: চাঁদা না পেয়ে হামলা, নারী লাঞ্ছনা’ শিরোনামে জসিম আজাদ ও তার ভাই মিজবাহ আজাদ যে সংবাদ প্রচার করেছে সম্পূর্ণ মিথ্যা বানোয়াট ও ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে প্রকাশ করা হয়েছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।

তিনি বলেন, মূলত বিএনপির জনপ্রিয়তার প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে আমার বিরুদ্ধে ৫ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবী করেছি বলে ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ নেতা তার মামা গফুর সওদাগর ও তাদের বাবা আবদুল আজিজ আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। আমার ২৮ বছর রাজনৈতিক জীবনে কারো কাছ থেকে চাঁদা বা কারোর টাকা আত্মসাৎ কিংবা কারোর ক্ষতি করেছি এমন প্রমাণ কেউ দিতে পারবেনা। তাছাড়া আমি একজন সফল ঠিকাদার ও রাজনীতিবিদ এবং পারিবারিক ভাবে সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান এবং আমি রত্নাপালং ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসাবে বিগত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলাম। সুতরাং আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা ভিত্তিহীন এবং প্রপাগাণ্ডা ছাড়া আর কিছুই নয়। সংবাদে আমাকে জড়িয়ে যা বলা হয়েছে তা রূপকথার গল্প ছাড়া আর কিছু না। আমি এই মিথ্যা সংবাদিটির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

বাবু বলেন, মূলত বিষয় টা হচ্ছে ফ্যাসিস্ট আ’লীগের সভাপতি গফুর সওদাগর তৎকালীন ক্ষমতার অপব্যবহার করে তাইমুন উদ্দিন গং থেকে জোরপূর্বক ভাবে জমিটি দখলে নেন। কিন্তু গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হলে তাইমুন উদ্দিন গং তাদের দীর্ঘদিনের খরিদা সূত্রে পাওয়া পৈতৃক জমিটি ফেরত দিতে গফুর সওদাগরকে প্রস্তাব দিলে গফুর ও জসিম বিষয়টা সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল কবির চৌধুরীকে অবগত করেন। পরবর্তীতে চেয়ারম্যান স্থানীয় ইউপি সদস্য, গণ্যমান্য ও অভিজ্ঞ সার্ভেয়ার দিয়ে উভয় পক্ষের জমির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পর্যালোচনা করে সরজমিন গিয়ে জমিটি জরিপ করেন এবং পরপর চারটি বৈঠক করেন। উক্ত বৈঠকে অন্যান্য’দের মতন আমিও উপস্থিত ছিলাম এলাকার একজন গণ্যমান্যব্যক্তিবর্গ হিসাবে।

সর্বশেষ বৈঠকে নুরুল কবির চৌধুরী ও তিনজন ইউপি সদস্য মিলে একটি লিখিত রায় ঘোষণা করেন। এই রায়ে তাইমুন উদ্দিন গং তাদের চারবছর আগে আওয়ামী নেতা কর্তৃক জোরপূর্বক দখলে নেওয়া জায়গাটি ফেরত নেওয়ার রায় পান। কিন্তু ওইদিনের বৈঠকে উপস্থিত ছিলাম বলেই কি আমার অপরাধী হয়ে গেলাম এ প্রশ্ন রেখে গেলাম আপনাদের কাছে।

বাবু আরও বলেন, জসিম আজাদ একজন সরওয়ার কামাল পাশা ও ছৈয়দ মোহাম্মদ নোমাম নেতৃত্বাধীন উখিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটির প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন, মিসবাহ আজাদ সাবেক ছাত্রলীগ নেতা, তাদের পিতা রত্না পালং ইউনিয়ন ওর্য়াড আ:লীগের ৭নং ওর্য়াড আওয়ামী লীগের সভাপতি, মামা গফুর সওদাগর উনিও ৮ নং ওয়ার্ড আ:লীগের সভাপতি। এছাড়াও আমাদের কাছে তথ্য আছে আ’লীগকে আবারও পূর্নবাসন করার জন্য উখিয়া উপজেলা আ:লীগের সভাপতির একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খুলেছেন যেখানে এই জসিম আজাদ যুক্ত আছেন।

তিনি সাংবাদিকের উদ্দেশ্য বলেন, জসিম আজাদ গংরা অতীতে উখিয়ায় অনেক রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে অনেক মানুষকে মিথ্যা অপবাদসহ নাটক করে মানহানী করেছেন, যা সবাই অবগত আছেন। জসিম আজাদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ নিয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের তদন্ত দাবি করেছেন এলাকাবাসী।’ আমি আপনাদের মাধ্যমে উখিয়ার সাংবাদিক সমাজ, সুশীল সমাজ , রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, জনপ্রতিনিধি ও জুলাই বিপ্লব আন্দোলনের পক্ষের ছাত্র-জনতা সহ গণ্য মান্য ব্যক্তিদের প্রতি আহবান করছি, প্রয়োজনে আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের বিষয়টি পুনরায় তদন্তের ব্যবস্থা করুন। অন্যতায় আমার মানহানির জন্য আমি যে কোন মূহুর্তে আইনি পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হব।

একই সংবাদ সম্মেলনে মৃত বাদশা মিয়া চৌধুরীর ছেলে তাইমুন উদ্দিন চৌধুরী উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে জমির মালিকানা সংক্রান্ত দলিল, খতিয়ান এবং চেয়রম্যানের রায়পত্র উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, ‘এই জমি আমাদের পৈত্রিক সম্পত্তি, যা দখলে নিতে গিয়ে পাঁচ বছর ধরে তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের একাংশের প্রভাব ও ভয়ভীতির মুখে ছিলাম। সম্প্রতি জমিটি ঘেরা দেয়ার পরেই আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচার শুরু হয়।’

এ বিষয়ে অভিযুক্ত জসিম আজাদ বলেন, ‘বিএনপি নেতা মাহফুজ উদ্দিন বাবুর নেতৃত্বে আমার জমি দখলের অপচেষ্টা চালানো হয়। এ ব্যাপারে ভূমি আইনে আদালতে আমি মামলা করেছি এবং বিএনপির উর্ধ্বতন নেতাদেরও অভিহিত করেছি।

 

বার্তাবাজার/এসএইচ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *