এটিএম আজহার এখনও কেন কারাগারে? সরকারের কাছে জবাব চান জামায়াত আমির

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, জামায়াতে ইসলামীর সাবেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম এখনও জেলে কেন? সরকারকে জবাব দিতে হবে। অচিরেই এই জননেতাকে জনগণের বুকে ফেরত দিন। মুক্তি না দিলে পুনরায় রাজপথে আন্দোলন শুরু হবে। আমরা ফ্যাসিবাদীদের ছেড়ে দেব না। এ দেশে ফ্যাসিবাদীদের তছনছ করে দেওয়া হবে।

শনিবার (১৯ এপ্রিল) বিকাল ৬টায় নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলা স্টেডিয়াম মাঠে বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি এখানে ২৩ মিনিট বক্তব্য রাখেন।

উপজেলা জামায়াতের আয়োজনে জনসভায় জলঢাকা উপজেলা জামায়াতের আমীর মোখলেছুর রহমান মাস্টারের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল, রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চলের পরিচালক মাওলানা আবদুল হালিম, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য, রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চলের সহকারী পরিচালক অধ্যক্ষ মাওলানা মমতাজ উদ্দিন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য, রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চলের টিম সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বেলাল, রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চলের টিম সদস্য মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ, কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য ও নীলফামারী জেলা জামায়াতের আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুস সাক্তার, ও জেলা মজলিশে শূরা সদস্য মাওলানা ওবায়দুল্লাহ সালাফী।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ফ্যাসিবাদীদের পতন হলেও ফ্যাসিবাদের পতন হয়নি। এখনও সর্বত্রই চাঁদাবাজ আর দখলবাজদের অত্যাচারে মানুষ অতিষ্ঠ। এসব চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে শুরু করেছে।

ডা. শফিকুর রহমান প্রধান উপদেষ্টার বরাত দিয়ে বলেন, আগামী ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে বলে তিনি (প্রধান উপদেষ্টা) ঘোষণা দিয়েছেন। আমরা নির্বাচন চাই। নির্বাচনের আগেই খুনিদের বিচার ও প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে। প্রয়োজনীয় সংস্কার ছাড়া পেশিশক্তির নির্বাচন দেশবাসী মেনে নেবে না। এজন্য যেকোনো নির্বাচনের আগে অবশ্যই দুটি কাজ সম্পন্ন করতে হবে। একটি হচ্ছে খুনিদের বিচার, এটা দৃশ্যমান হতে হবে। আরেকটি হচ্ছে প্রয়োজনীয় সংস্কার। কালোটাকার ভোট চাই না।

জামায়াতের আমীর বলেন, জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার না হলে জনগণ কোনো নির্বাচন মেনে নেবে না। জাতীয় নির্বাচনের আগে সরকারকে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত পূরণ করতে হবে। সেগুলো হলো—বিচার, সংস্কার ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ব্যবস্থা। তিনি আরও বলেন, হাজারো প্রাণের বিনিময়ে দেশে পরিবর্তনের সূচনা হয়েছে। এ পরিবর্তনের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হলে সংস্কার অপরিহার্য। রাজনৈতিক দলগুলো যত দ্রুত আন্তরিকতা নিয়ে এগিয়ে আসবে, তত দ্রুত নির্বাচনমুখী পরিবেশ তৈরি হবে।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ১৮ কোটি নির্যাতিত মানুষের প্রথম দাবি, গণহত্যার বিচার। শহীদ পরিবারগুলোর পুনর্বাসন, আহতদের চিকিৎসা ও পঙ্গুদের সহযোগিতা নিশ্চিত করে আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে হবে। বিচার ও মৌলিক সংস্কার ছাড়া নির্বাচনের কোনো অর্থ নেই। জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে জামায়াতের আমীর বলেন, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সংযত ও সচেতনভাবে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হোক। জাতিকে কেউ এ নিয়ে চোখ রাঙাবেন না। আমাদের বাংলাদেশের উন্নয়নে এই পরিকল্পনায় কেউ বাধা দিতে পারে না। ভারতের বিষয়ে উল্লেখ করে ভারতের সঙ্গে সম্প্রীতি, শ্রদ্ধা ও সমতার ভিত্তিতে প্রতিবেশী হিসেবে বসবাসের দাবি জানিয়ে জামায়াতের আমীর বলেন, আমরা ভালো থাকলে, তারাও ভালো থাকবে। আমাদের ভালোটা কেড়ে নিলে ভারতকে চিন্তা করতে হবে, তারা ভালো থাকবে কিনা।

আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ফ্যাসিস্টরা জনগণের অধিকার ও কর্মসংস্থান কেড়ে নিয়েছিল। গুম-খুন আয়না ঘরে বন্দি করে জনগণের কণ্ঠরোধ করেছিল। জনগণের আন্দোলনে তারা শুধু গদিই ছাড়েনি, দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। সহকর্মীদের পর্যন্ত বলে যেতে পারেনি। যারা দেশকে ভালোবাসে তারা কখনও দেশ ছেড়ে পালায় না, দেশের টাকা চুরি করে বিদেশে বেগমপাড়া বানায় না। জনগণের বিপক্ষে গিয়ে কেউ রেহাই পায়নি, পাবেও না। তিনি দেশের উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আগামী নির্বাচনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে ক্ষমতায় আনার আহ্বান জানিয়ে বলেন, জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের সম্মান, নিরাপত্তা ও কাজের ব্যবস্থা করবে।

বিশাল এই জনসভায় ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ফ্যাসিস্টদের বিদায়ের পরে আমরা ১৫ দিন মসজিদ, মন্দির ও গির্জা-মঠ পাহারা দিয়েছি। আমরা এমন রাষ্ট্র কায়েম করতে চাই, যেখানে কোনো প্রতিষ্ঠান পাহারা দিতে না হয়। সংখ্যালঘু নয়, নিরাপত্তা সবাইকে দেওয়া হবে। আমরা ওয়ারেন্টি দিচ্ছি। দেশের প্রতিটি মানুষ নিরাপত্তা ও সম্মান নিয়ে বাঁচবে। আমরা আল্লাহকে ভয় করি। যারা আল্লাহকে ভয় করে তারা কখনই অন্যের সম্পদ, সম্মান ও ইজ্জত নষ্ট করে না। আমরা সৎ লোকের শাসন ও কোরআনের শাসনে বাংলাদেশকে বদলে দিতে চাই। এতে আপনাদেরকে পাশে চাই। আপনাদের বুকে একটু ঠাঁই চাই।

নিরাপত্তা প্রসঙ্গে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, বিগত ৫৪ বছরের সরকারগুলো নারীদের নিরাপত্তা ও সম্মান-মর্যাদা দিতে পারেনি। অনেকেই বলে, জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীরা চাকরি করতে পারবে না—যা ভুল ধারণা। আমরা আগে নারীদের নিরাপত্তা ও সম্মান-মর্যাদা নিশ্চিত করে নিরাপদ কর্মস্থল গড়ে তুলব। আমরা এমন বাংলাদেশ গড়তে চাই, যেখানে নারীরা স্বাধীনভাবে চলবে, কেউ তার দিকে চোখ তুলে তাকানোর সাহস পর্যন্ত পাবে না।

শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে আমীরে জামায়াত বলেন, বর্তমানের শিক্ষিতরা নিজেকে রাজা মনে করে। শিক্ষা জীবন শেষ করে কর্মসংস্থানের জন্য দুয়ারে দুয়ারে নিস্ফল ঘুরে আত্মহত্যাও করছে বর্তমান শিক্ষিতরা। আমরা চাই, শিক্ষা জীবন শেষ করে সনদ নিয়ে সোজা কর্মসংস্থলে যাবে আমাদের সন্তানরা। সেই শিক্ষা ব্যবস্থা ও কর্মস্থল নিশ্চিত করতে হবে।

দুর্নীতি প্রসঙ্গে আমীরে জামায়াত বলেন, রাষ্ট্র পরিচালনায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্মানজনক বেতন-ভাতা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে তারা সন্তোষজনক ভাতা নিয়ে সম্মানের সঙ্গে মানুষের সেবা করতে পারে, নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে পারে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতি করতে বাধ্য করেছে রাষ্ট্রযন্ত্র। ১৩ হাজার টাকা বেতন পাওয়া কর্মচারীকে বাসা-ভাড়া যদি ১৫ হাজার টাকা দিতে হয়, তাহলে সেই কর্মচারী কী করবে? আমরা এমন রাষ্ট্র চাই, যেখানে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ সম্মান নিয়ে বাঁচতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *