অনৈতিক ও উচ্ছৃঙ্খল কর্মকাণ্ডে বাধা দেওয়ায় মাকে নির্যাতন করতেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ।
এমন অভিযোগ করে তুরিনের মা সামসুন নাহার তাসলিম জানিয়েছেন, তুরিনের অনৈতিক ও উচ্ছৃঙ্খল কর্মকাণ্ডে বাধা দেওয়ায় সে আমার সঙ্গে এসব করতো। এখন নতুন সরকার এসেছে। ড. ইউনূসের সরকারের কাছে আবেদন আমার বাসা ফেরত দেওয়া হোক।
তুরিনের মা জানান, জামায়াতের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক না থাকলেও তুরিন আফরোজ প্রতিনিয়ত সব জায়গায় তাকে জামায়াতের রুকন বলে অপপ্রচার চালাতো। এটা করে আওয়ামী লীগের শাসনামলে ক্ষমতার অপব্যবহার করে তাকে উত্তরার বাসা থেকে বের করে দেওয়া হয়।
গত বছরের নভেম্বরে তুরিনের মা বলেন, রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে তুরিন আমাকে ভয় দেখায়। আমি থানায় জিডি করতে গেলে আমার জিডি নেয় না। আমাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসিয়ে রাখে। ২০২৩ সালে আমি তার বিরুদ্ধে একটি সংবাদ সম্মেলন করার পরে অকথ্য নির্যাতনের শিকার হয়েছি। তুরিন আমার নামে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে কুৎসা রটনা করে। এদিকে সোমবার রাতে উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরের একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে তুরিন আফরোজকে গ্রেপ্তার করেছে উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের এক হত্যাচেষ্টা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ডিএমপি উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার মো. মহিদুল ইসলাম।
তিনি বলেন, গত ২৭ মার্চ উত্তরাতে একটি হত্যাচেষ্টা মামলা হয়েছে। তিনি এজহারভুক্ত আসামি। তার গতিবিধি নজরদারিতে রেখেছিলাম। সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে রাতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া নীলফামারিতে তার নামে আরও মামলা আছে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগের সরকার পতনের পর দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর একে একে গ্রেপ্তার হতে থাকেন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ শীর্ষ পর্যায়ের নেতা ও প্রভাবশালী সংসদ সদস্যরা। আওয়ামী লীগ সরকারের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিতি পাওয়া ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা ও পুলিশ কর্মকর্তাদেরও গ্রেপ্তার করা হয়। সেই ধারাবাহিকতায় সরকার পতনের আট মাসের মাথায় আইনজীবী তুরিন আফরোজকে গ্রেপ্তারের তথ্য দিল পুলিশ।
তুরিন আফরোজ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার চলাকালে ২০১৩ সাল থেকে ২০১৯ সালের নভেম্বর পর্যন্ত প্রসিকিউটরের দায়িত্বে ছিলেন। জামায়াতে ইসলামীর আমির গোলাম আযমের মামলাসহ গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি মামলা পরিচালনায় তিনি ভূমিকা রাখেন।
২০১৭ সালের নভেম্বরে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) মুহাম্মদ ওয়াহিদুল হকের বিরুদ্ধে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধ মামলা পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয় তুরিনকে। তবে যুদ্ধাপরাধ মামলার আসামি ওয়াহিদুলের সঙ্গে গোপন বৈঠকের ঘটনায় ২০১৯ সালের ১১ নভেম্বর ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর পদ থেকে তাকে অপসারণ করা হয়।
বার্তাবাজার/এসএইচ