গাজায় যখন চলতি শতাব্দীর অন্যতম ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় চলছে, ঠিক সেই সময়েই সৌদি আরবের মদিনা সংলগ্ন আল-উলা এলাকায় আয়োজিত ডিজে পার্টি ঘিরে উঠে এসেছে তীব্র সমালোচনার ঝড়।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া বেশ কিছু ভিডিওতে দেখা যায়, তরুণ-তরুণীরা পশ্চিমা সঙ্গীতের তালে নাচছেন, আরব পোশাকে উদ্দাম উৎসবে মেতে আছেন। ভিডিওগুলোতে দাবি করা হয়, এগুলোর বেশিরভাগই মদিনার নিকটে বিখ্যাত এলিফ্যান্ট রক এলাকায় ধারণ করা হয়েছে।
এক টুকরো রুটির জন্য শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে বৃদ্ধ নারীরা হেঁটে চলেছেন মাইলের পর মাইল। বোমা হামলা থেকে ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেলেও, খাদ্যের জন্য প্রতিযোগিতা করে সংগ্রহ করতে হচ্ছে খাবার। একটি কুপন পেতে হাঁটতে হয় প্রায় ৪ কিলোমিটার — যা অসুস্থ ও দুর্বলদের জন্য প্রায় অসম্ভব। এক ফিলিস্তিনি নারী বলেন, “পৃথিবীর অন্য প্রান্তের মানুষের মত আমরাও মানুষ। রাজপ্রাসাদ বা বিলাসিতা চাই না—শুধু খাবার চাই ক্ষুধা নিবারণের জন্য।” গাজাবাসীর এই অসহনীয় অবস্থা সামনে আসতেই, সৌদি আরবের ডিজে পার্টির ভিডিও ছড়িয়ে পড়ায় ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন নেটিজেনরা। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন—“পবিত্র মক্কা-মদিনার দেশে এই সময় উদ্দাম পার্টি আয়োজন কতটা যুক্তিসঙ্গত?”
বিশেষ করে গাজার মতো মুসলিম ভূখণ্ডে জাতিগত নিধনের অভিযোগ, বোমা হামলা ও যুদ্ধাপরাধের মতো ঘটনাগুলোর মধ্যে সৌদি আরব ও অন্যান্য আরব দেশগুলোর নীরবতা বরাবরই সমালোচিত হয়ে আসছে। এদিকে, কাতারেও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে অনুষ্ঠিত লুসাইল ফেস্টিভালে রঙিন এয়ারশো ও উন্মুক্ত কনসার্ট আয়োজন নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। মুসলিম বিশ্বের একাংশ এইসব আয়োজনকে “সময় ও বাস্তবতার প্রতি অশ্রদ্ধা” হিসেবে বিবেচনা করছে।
এই বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছেন সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান (এমবিএস)। তার উদার সংস্কার ও পশ্চিমা জীবনধারার প্রতি ঝোঁকের কারণে অতীতে বহুবার বিতর্কে জড়িয়েছেন তিনি। এবার গাজা যুদ্ধকালীন এমন অনুষ্ঠানের অনুমতি দেওয়াকে কেন্দ্র করে ফের আন্তর্জাতিক মহলে আলোচনায় তিনি।
সৌদি আরবের এই সংস্কারমূলক দৃষ্টিভঙ্গি যেমন কিছু তরুণ সমাজে গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে, তেমনই ধর্মীয় ও মানবিক সংকটের সময় এমন উদ্যোগ তাদের অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে।
বার্তাবাজার/এসএইচ