বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার ধর্মগড় ইউনিয়ন ও পার্শ্ববর্তী উপজেলা হরিপুরে এবারও হচ্ছে না বাংলাদেশ-ভারত দুই বাংলার মিলনমেলা।
শনিবার (১২ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাণীশংকৈল উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাফিউল মাজলুবিন রহমান। মিলন মেলায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় দুই দেশের আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে দেখা হবে না। এ নিয়ে অনেকের মনে চাপা কষ্ট বিরাজ করছে। বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে প্রতি বছর ১৪ এপ্রিল ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বসে এ মিলন মেলা। বাংলা নতুন বছরকে কেন্দ্র করে কাঁটাতার মাঝে রেখে দু’দেশের মানুষ মিলিত হতেন। এ বছরেও সেই মেলা হওয়ার কথা ছিল আগামী সোমবার। কিন্তু দুই দেশের রাজনৈতিক টানাপোড়েন এবং কূটনৈতিক সম্পর্কের জটিলতার কারণে ওই স্থানে বিশৃঙ্খলা, মারামারিসহ বিভিন্ন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে মর্মে বাংলাদেশ- ভারত সীমান্তবর্তী মিলনমেলা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে উপজেলা প্রশাসন।
প্রতি বছরেই দুই দেশের সীমান্তের মধ্যবর্তী স্থানে আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হতো। সবাই একে অপরকে আলিঙ্গন করে সব ভেদাভেদ ভুলে যেত কিছু সময়ের জন্য কিন্তু এবার সেই অন্যরকম আনন্দ চোখে পড়বে না। স্থানীয় বাসিন্দা দিলীপ কুমার বলেন, বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে প্রতি বছর এখানে একদিনের জন্য মেলা বসে আসছে। দেশ স্বাধীনের পর মেলাটি বাংলাদেশের অংশে পড়লেও মেলায় সীমান্তে উন্মুক্ত করে দেয় ভারত। কিন্তু দেশের অবস্থা ভালো না, তাই এবার মিলনমেলা হবে না। আমরা হতাশ।
প্রতিমা বালা ও রুপসী রাণী পাল নামে কয়েকজন বলেন, আমার বোন ও বোনজামাই ওপার বাংলায় (ভারত) থাকে। প্রতিবছর এই মেলায় আমরা তাদের দেখতে আসি। ভারত বাংলাদেরশের তারকাঁটার বেড়ার পাশে দাঁড়িয়ে শুরু হয় দুই দেশের মানুষের দেখা-সাক্ষাৎ। করি খাবার বিনিময়। দীর্ঘদিন পর স্বজনদের পেয়ে আমরা অনেক আনন্দিত হই। কিন্তু এবার তা হচ্ছে না। মুসলিম উদ্দিন নামে এক বৃদ্ধ বলেন, আমার ছোট ভাই ও মামার বাড়ি ভারতে। দেশ ভাগের পর বিভক্ত হয়ে পড়ি। আমরা তো ভারতে যেতে পারি না। তাই প্রতি বছর নববর্ষের দিনে আমরা কাঁটাতারে দেখা করতাম। কিন্তু এবারো নাকি মিলনমেলা বসবে না। কয়েক বছর ধরে তাদের সঙ্গে আমার দেখা হয় না।
একই কথা বলেন হরিপদ রায়। তিনি বলেন, ভারতে আমার মামার বাড়ি। আমার অনেক আত্মীয়-স্বজন সেখানে রয়েছে। নববর্ষ এলেই আমরা সীমান্তে এসে দেখা করতাম। কয়েক বছর ধর পহেলা বৈশাখে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত অভিমুখে এবারো বসবে না দুই বাংলার মিলনমেলা। ফলে কষ্ট হচ্ছে আমাদের।
এ বিষয়ে রাণীশংকৈল উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাফিউল মাজলুবিন রহমান বলেন, সীমান্তে নিরাপত্তা ও অপ্রীতীকর ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে মর্মে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী মিলনমেলা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
বার্তাবাজার/এসএইচ