নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের জন্য ২০ এপ্রিল পর্যন্ত আবেদন গ্রহণ করার কথা জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে এ সময়ের মধ্যে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পক্ষে নিবন্ধনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি শেষ করা সম্ভব হচ্ছে না। সে জন্য দলটি নিবন্ধনের আবেদন গ্রহণ করার সময়সীমা পেছানোর আবেদন করবে। এনসিপির প্রতিনিধিদল শিগগিরই এ ব্যাপারে ইসির কাছে যাবে।
এনসিপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন ধারণা পাওয়া গেছে। নিবন্ধনের শর্ত পূরণের জন্য কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দলের প্রয়োজনীয় সংখ্যক কার্যালয় স্থাপন, দলীয় কমিটি ও গঠনতন্ত্র চূড়ান্ত করাসহ যাবতীয় প্রস্তুতি আগামী দুই মাসের মধ্যে শেষ করার চেষ্টা করছে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের উদ্যোগে গঠিত নতুন এই দল।
ইসি গত ১০ মার্চ গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের জন্য আবেদন আহ্বান করে। আবেদনের শেষ তারিখ ২০ এপ্রিল। কিন্তু ইসির গণবিজ্ঞপ্তির বৈধতা নিয়ে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের পক্ষ থেকে হাইকোর্টে রিট করা হয়। ১৮ মার্চ ওই রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে আদালত রুলসহ আদেশ দেন। রিটকারী পক্ষের আইনজীবী আবেদা গুলরুখ সেদিন সাংবাদিকদের বলেন, হাইকোর্ট গণবিজ্ঞপ্তির কার্যকারিতা স্থগিতের পাশাপাশি রুল জারি করেছেন। তবে এ স্থগিতাদেশ শুধু রিট আবেদনকারীর (রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন) ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।
এনসিপির যাত্রা শুরু করেছে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি। ইসিতে নিবন্ধনের জন্য দলের কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সক্রিয় কেন্দ্রীয় অফিস থাকা, অনূর্ধ্ব এক-তৃতীয়াংশ প্রশাসনিক জেলায় জেলা অফিস এবং অন্যূন ১০০টি উপজেলা বা ক্ষেত্রমতে মেট্রোপলিটন থানায় অফিস (যার প্রতিটিতে সদস্য হিসেবে ন্যূনতম ২০০ ভোটার তালিকাভুক্ত হতে হবে) থাকতে হয়। পাশাপাশি দলের গঠনতন্ত্রে কিছু বিষয় উল্লেখ থাকতে হয়। তবে ২০ এপ্রিলের মধ্যে নিবন্ধনের এসব শর্ত এনসিপির পক্ষে পূরণ করা সম্ভব নয়।
এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন মনে করেন, তাঁদের দলকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য ২০ এপ্রিল পর্যন্ত নিবন্ধনের আবেদন গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করেছে ইসি। তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমাদের দলের ফোরামে কথা হয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে এনসিপির পদক্ষেপ কী হবে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।’ নিবন্ধনের প্রস্তুতিসংক্রান্ত কাজের জন্য এনসিপি একটি টিম গঠন করেছে বলে জানান দলের আরেক জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব। এই টিম শিগগিরই ইসির সঙ্গে আলোচনায় যাবে বলে জানান তিনি।
এনসিপির একজন শীর্ষ নেতা আজ মঙ্গলবার বলেন, নিবন্ধনের আবেদন গ্রহণের তারিখ পেছানোর জন্য এনসিপির পক্ষ থেকে আবেদন করা হবে। দুই মাসের মধ্যে প্রস্তুতির লক্ষ্য কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দলের নিবন্ধনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক কার্যালয় স্থাপন, দলীয় কমিটি ও গঠনতন্ত্র চূড়ান্ত করাসহ যাবতীয় প্রস্তুতি আগামী দুই মাসের মধ্যে শেষ করার চেষ্টা করছে এনসিপি। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক নেতা এ কথা জানিয়েছেন।
দলীয় কমিটি গঠনের জন্য শিগগিরই বিভাগীয় সমন্বয়ক টিম গঠন করা হবে বলে জানান এনসিপির শীর্ষস্থানীয় একজন নেতা। তিনি বলেন, উপজেলা পর্যায়ে দলীয় কমিটি মোটামুটি প্রস্তুত আছে। জেলাগুলো গোছাতে হবে। এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটি যে ধাঁচে করা হয়েছে, সেভাবে জেলা–উপজেলা কমিটিগুলো করা হবে উল্লেখ করে ওই নেতা বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে একটা অংশ, জাতীয় নাগরিক কমিটি থেকে একটা অংশ এবং এর বাইরে বিভিন্ন পেশার মানুষকে নিয়ে কমিটিগুলো করা হবে।
এ ছাড়া চলতি এপ্রিল মাসে এনসিপির যুব শাখা আত্মপ্রকাশ হতে যাচ্ছে। ঈদুল ফিতরের আগে ২৩ মার্চ দলটির শ্রমিক শাখার সমন্বয়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এই দুটি শাখার বাইরে নারী শাখাসহ বিভিন্ন পেশাজীবী শাখা বা উইং গঠনের কাজ চলছে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়েও একটি ফোরামের কথা ভাবা হচ্ছে।
বার্তাবাজার/এসএইচ