সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যার বিচার আওয়ামী লীগ সরকার করেনি নিজেদের স্বার্থে। ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় নিজেদের ফ্ল্যাটে ‘টার্গেট কিলিং’-এর শিকার হবার পর গত একযুগ ধরে বিচারের বাণী কেঁদেছে নিরবে নিভৃতে। মেহেরুন রুনি কাজ করতেন এটিএন বাংলায়। সামিট গ্রুপের স্বার্থ বিনষ্ট হবে এমন একটি জ্বালানি বিষয়ক এক্সক্লুসিভ রিপোর্ট তৈরি করেছিলেন রুনি। কিন্তু এটিএন বাংলায় প্রচারের আগেই তা আটকে দেয় চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান। ভেতরে বাইরে শুরু হয় তোলপাড়।
এমতাবস্থায় রুনি তাঁর করা প্রতিবেদনটি প্রকাশের জন্য মাছরাঙা টেলিভিশনে কর্মরত তাঁর স্বামী সাগর সারোয়ারের হাতে তুলে দিলে ঐদিন রাতেই মাহফুজুর রহমান তার ভাই এটিএন বাংলার পরিচালক মাকসুদূর রহমান রঞ্জুকে পাঠায় সাগর-রুনি’র ফ্ল্যাটে। যে কোন মূল্যে সাগরের ল্যাপটপ উদ্ধার করার মিশন সম্পন্ন করতে রঞ্জুর সাথে চুক্তিবদ্ধ হয় ভাড়াটে খুনিরা। যেমন পরিকল্পনা তেমন কাজ। ল্যাপটপ বাজেয়াপ্ত করতে রঞ্জুর ভাড়া করা খুনিরা সফল হলেও নৃশংসভাবে নিহত হন সাগর রুনি দুজনেই। হত্যাকাণ্ডের পরদিন রঞ্জু গ্রেফতার হলেও মাহফুজুর রহমান প্রভাব খাটিয়ে তার ভাইকে ছাড়িয়ে আনে। তার একদিন পরই দেশ ছেড়ে পালায় রঞ্জু।
অন্যায় অবিচার অত্যাচার জুলুম নির্যাতন দুঃশাসন সহ মেগা মাল্টি লুটপাটের বিরুদ্ধে বিপ্লবী ছাত্র জনতার দুনিয়া কাঁপানো গণঅভ্যুত্থানে পতিত পদচ্যুত ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরাচার স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাবার পর বাংলাদেশে ইতোমধ্যে উদিত হয়েছে স্বাধীনতার নতুন লাল সূর্য। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ১৮ আগস্ট সাফ জানিয়েছেন,”সাগর রুনি হত্যাকাণ্ড খুবই বেদনাদায়ক, খুবই নির্মম, এই হত্যাকাণ্ডের বিচার নিয়ে প্রহসন করা হয়েছে, বার বার তার প্রতিবেদনগুলা পেছানো হয়েছে। পুনঃতদন্তের মাধ্যমে আমরা দ্রুত বিচার নিশ্চিত করবো”।
এদিকে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানাচ্ছে, সাগর-রুনি খুন হবার সময় এটিএন বাংলা এবং মাছরাঙা টেলিভিশনে যারা কাজ করতো, তারা ছাড়াও ঢাকার গণমাধ্যমের মুখচেনা সাংবাদিক এবং সম্পাদক সহ সুপরিচিত অনেকেই অপ্রকাশিত সব সত্যের নিরব স্বাক্ষী। কিন্তু জানের ভয়ে কেউই মুখ খুলেনি আওয়ামী আমলে। সাগর সারোয়ার এবং মেহেরুন রুনির আদরের সন্তান মেঘ আজও বিচার পায়নি তাঁর বাবা-মা’র হত্যার। মেঘে মেঘে অনেক বেলা গড়িয়েছে, নতুন করে স্বাধীন হয়েছে আজ বাংলাদেশ। সাগর-রুনি হত্যার বিচার নিয়ে গত এক যুগের রাষ্ট্রীয় প্রহসনের দ্রুত অবসান হোক, এটাই আমাদের রক্তিম প্রত্যাশা। সুত্র সাংবাদিক মইনুল