নিউ ইয়র্কে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের ‘ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ লিডারস স্টেজ’ অনুষ্ঠানে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে মঞ্চে ওঠা ‘তৃতীয় ব্যক্তি’ নিজের পক্ষ সমর্থন করে একটি ভিডিও বার্তা দিয়েছেন। সেখানে তিনি নিজেকে জাহিন রোহান রাজিন বলে পরিচয় তিনি।
এও জানান, তিনি হাইড্রোকো প্লাস নামে একটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকেও এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়।
জাহিন ‘তৃতীয় ব্যক্তি’ হিসেবে পরিচিত হন ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম তাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দেওয়ার পর।
ওই পোস্টে মাহফুজ লেখেন- ‘সিজিআই ইভেন্টের লোকটা একজন অনুপ্রবেশকারী এবং অসাধু লোক ছিল। তিনি সিজিআই ইভেন্টে যোগদান করেছেন নিজ থেকে। তার উপস্থিতি ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানা ছিল না সেখানকার প্রতিনিধি দলের সদস্যদের। তিনি প্রতিনিধি দলের কারো সঙ্গে আগে যোগাযোগ করেননি। স্যার যখন আমাদের স্টেজে ডেকেছেন তখন তাড়াহুড়া করে দাঁড়িয়ে আমাদের আগে স্টেজের দিকে দৌড়ে গেলেন। আমি ওই লোকটাকে স্টেজে যাওয়া থেকে বিরত করতে পারলাম না, যদিও আমি সন্দিহান ছিলাম।
বিশ্বনেতা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের মাঝে আবারও অসহায় হলাম। মনে হচ্ছে, এই কূটাঘাত ওই ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠীর একটি পূর্ব-পরিকল্পিত কাজ। আন্দোলন ও গণঅভ্যুত্থানের নেতা, সমন্বয়কারী ও যোদ্ধাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। আমরা আগামী দিনে গণঅভ্যুত্থান এর প্রতিনিধিত্ব সম্পর্কে খুব সতর্ক থাকব। ’
এরপরই আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয় জাহিনকে নিয়ে। আত্মপক্ষ সমর্থন করে বিষয়টি নিয়ে ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ‘আমি অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পেয়েছিলাম সিজিআই ফেলো হিসেবে। ড. ইউনূস ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দকে যখন ডাকলেন, তখন আমি দর্শক সারিতে ছিলাম। পাশে ছিলেন দুই বিদেশি ভদ্রলোক। তারা আমাকে বললেন, তুমি বাংলাদেশি তরুণ, তুমিও যাও। তাই আমি কিছু না ভেবেই স্টেজে উঠে গেছি। ’
জাহিন আরও বলেন, ‘২০২১ সালের ইউনূস অ্যান্ড ইয়ুথ ফেলো আমি। আমার প্রতিষ্ঠান হাইড্রোকো প্লাসের কাজ এগিয়ে নিতে আমি ড. ইউনূসের সঙ্গে দেখা করতে চাচ্ছিলাম। নিউইয়র্কে সিজিআইয়ের অনুষ্ঠানে তিনি আসবেন শুনে খুশি হয়েছিলাম এ কারণে যে, তার কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগ হবে। ’
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলামের সঙ্গে জাহিনের ছবি রয়েছে। ছবিটি ভাইরাল হলে তিনি ‘আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট’ বলে দাবি করেন অনেকেই। এ বিষয়ে জাহিন বলেন, ‘২০২২ সালে ঢাকা ওয়াসার সঙ্গে একটা কাজ করে হাইড্রোকো প্লাস। সে কাজের জন্যই মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে হয়েছিল। সেসময় তোলা ছবিটি। এটি কীভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এলো, তা জানি না। আন্দোলনের সময় দেশেই ছিলাম। এ আন্দোলন সমর্থন না করার প্রশ্নই আসে না। ’
প্রসঙ্গত, ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ লিডারস স্টেজ ওঠার পর বাংলাদেশের সাম্প্রতিক বিষয় নিয়ে কথা বলেন ড. ইউনূস। প্রসঙ্গক্রমে তার বক্তব্যে উঠে আসে ঘরে যাওয়া গণঅভ্যুত্থানের নানা দিক। এ সময় তিনি মঞ্চে ডেকে নেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ড. ইউনূসের বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আয়েশা সিদ্দিকা তিথিসহ তিন প্রতিনিধিকে। তিনি তার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলমকে সরকার পতন আন্দোলনের ‘নেপথ্য কারিগর’ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন।
মাহফুজ ও তিথির সঙ্গে মঞ্চে ওঠেন জাহিন। কিন্তু প্রথম দুজনের নাম সফরসঙ্গীর তালিকায় থাকলেও তৃতীয়জন ছিল না। মাহফুজ ও তিথির সঙ্গে মঞ্চে উঠে বিল ক্লিনটনের সঙ্গেও কুশল বিনিময় করেন জাহিন। ড. ইউনূসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তার পাশে দাঁড়ান।