যেভাবে গোমতী নদী বাহারের নিয়ন্ত্রণে: গোমতী নদীর কমপক্ষে দেড়শ’ পয়েন্ট দিয়ে ড্রেজার লাগিয়ে দিনেরাতে বালু ও মাটি উত্তোলন করে বিক্রি করেছে সাবেক এমপি বাহারের অনুসারীরা। বিক্রি হয়েছে গোমতীর চর ও বাঁধ। প্রতি শতক ৬০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা দরে এই জমি বিক্রি করা হয়। সাদা স্ট্যাম্পে লিখে দেয়া হয় এই জমি। কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার টিক্কারচর এলাকায় সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, কোথাও ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন হচ্ছে। কোথাও নদীর বাঁধের ভেতরের ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে। আবার কোথাও নদীর বাঁধ ও সড়ক কেটে পাইপ দিয়ে বালু ফেলে জলাশয় ভরাট চলছে। শুধু টিক্কারচর ও বানাসুয়া পয়েন্ট থেকে কোটি কোটি ঘনফুট মাটি কেটে নেয়া হয়। এতদিন বালু ও মাটি কাটার কাজ নিয়ন্ত্রণ করতেন সদর দক্ষিণ থানার পাঁচথুবী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাছান রফি রাজু। তিনি বাহার সমর্থিত চেয়ারম্যান। ট্রাক ভরে মাটি যাচ্ছে সাকুরা ব্রিক্স, তিতাস, রাজা মিয়া ব্রিক্স ফিল্ড, ইয়াসিন ব্রিক্স, সাকুরা-২ ইটভাটায়। প্রতি ট্রাক্টর মাটি ২২০০ টাকা, ডাম্প ট্রাক ৩০০ টাকা বিক্রি করা হয়। দৈনিক প্রায় ৫০ থেকে ৭০ ট্রাক মাটি সরিয়ে নেয়া হয়। এতে বছরে প্রায় ৩০ কোটি টাকার মাটি ও বালু সরিয়ে নেয়া হয়। এই পুরো টাকাই বাহারের পকেটে যেতো।
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার মালিশাইল এলাকার গোমতী নদী থেকে দলীয় প্রভাবে ও প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে দীর্ঘদিন যাবত বালু উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা যুবলীগের নেতা জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে। স্থানীয়দের অভিযোগ এরই মধ্যে কয়েক কোটি টাকা মূল্যের বালু বিক্রি করে অভিযুক্ত যুবলীগ নেতা এখন আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছে।
অভিযুক্ত যুবলীগ নেতার নাম জাহাঙ্গীর আলম। তিনি উপজেলার ত্রিশ গ্রামের রুপ মিয়ার ছেলে ও উপজেলা যুবলীগের সদস্য।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, অভিযুক্ত যুবলীগ নেতা যুবলীগ নেতা গোমতীর বালু এবং মাটি উত্তোলন করে দিন দিন হয়ে উঠছে বেপরোয়া। জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে নালিশ করে কেউ পার পায় না। ৩ বছর যাবত নবীপুর পশ্চিম ইউনিয়নের উত্তর এবং দক্ষিণ ত্রিশ গ্রামের গোমতীর চর এবং ফসলি জমির অস্তিত্ব বিলীন করে দিয়েছেন যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম। দু’টি গ্রামের সাধারণ মানুষ এবং কৃষক জাহাঙ্গীরের কাছে অসহায়। শুধু তাই নয়, তার ক্ষমতার দাপটে সাধারণ মানুষ প্রতিবাদের ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। অভিযোগ রয়েছে তার বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে কারও কথা বলার সাহস নেই। কৃষকের চরের জমির মাটি লুটে নিলেও কারও কিছু বলার ভাষা নেই। অসহায় হয়ে নামমাত্র মূল্যে চরের জমি জাহাঙ্গীরের কাছেই বিক্রি করতে হচ্ছে কৃষকদের। পাঁচ বছর যাবত তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ গ্রহণ করছে না পুলিশ ও প্রশাসন। অভিযোগ করতে গিয়ে অদৃশ্য শক্তির রোষানলে পড়তে হচ্ছে ভুক্তভোগীদের।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই যুবলীগের এ নেতা মাটি উত্তোলন করছেন! তা না হলে কিভাবে ৩ বছর যাবত মাটি উত্তোলন করছে। স্থানীয় প্রশাসন বিভিন্ন সময় মাটি উত্তোলনের কার্যক্রম বন্ধ করেছে ঠিকই কিন্তু তা ছিলো লোক দেখানো। প্রশাসনের লোক দেখানো অভিযান স্থানীয়দের মাঝে দিন দিন চরম ক্ষোভ ও সমালোচনার সৃষ্টি করেছে।
ত্রিশ এলাকার বেশ কয়েকজন কৃষক অভিযোগ করে বলেন, নদীতীরে আমাদের নিজেদের জমিতে চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করতাম। কিন্তু অভিযুক্ত ওই নেতা যেভাবে চরের ফসলি জমির মাটি ও বালু উত্তোলন করে নিচ্ছে তাতে আমাদের সব জমি নদীতে বিলীন হয়ে যাবে। আমরা নিঃস্ব হয়ে যাবো।
অভিযুক্ত যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম সরকার বলেন, গোমতী নদীতে আমি ড্রেজার চালাই না। কে চালায় তাও জানি না।
মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলাউদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, এর আগে বেশ কয়েকবার বালু ও মাটি উত্তোলনের কার্যক্রম বন্ধ করেছি। বর্তমানে আবার মাটি উত্তোলন করছে কিনা বিষয়টি জানা নেই। যদি আবার চালু হয়ে থাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান বলেন, ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের বিষয়টি জানা নেই। উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের থেকে বিষয়টির খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।