বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারি: দেশেই আছেন বাচ্চু, বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা

রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির মূল হোতা ও ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চু দেশেই আছেন। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এরই মধ্যে বাচ্চুর বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। সংস্থাটির দায়িত্বশীর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, ১৫ জুন পুলিশের বিশেষ শাখায় (এসবি) এ-সংক্রান্ত চিঠি দিয়েছে দুদক। এতে বলা হয়, শেখ আবদুল হাই বাচ্চুসহ একাধিক আসামির বিরুদ্ধে ঋণ জালিয়াতিসহ বেসিক ব্যাংকের প্রায় ২ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ মামলার রেকর্ডে প্রমাণ পাওয়া গেছে। গোপন সূত্রে খবর পাওয়া যায়, মামলার তদন্তে আসা আসামি শেখ আবদুল হাই বাচ্চু দেশ ত্যাগ করে অন্য দেশে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।

ওই চিঠিতে, তিনি যেন বিদেশ যেতে না পারেন সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশেষ পুলিশ সুপারকে বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়।

দুদক সূত্র জানায়, ১২ জুন বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির ৫৯টি মামলার ৫৮টিতে বাচ্চুকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেয় সংস্থাটি। দুদকের অভিযোগপত্র দেওয়ার পরপরই বেসিক ব্যাংকের সাবেক এই চেয়ারম্যান দেশে আছেন নাকি পালিয়েছেন সে বিষয়ে শুরু হয় নানা জল্পনা। দুদকের গোয়েন্দা ইউনিটও নেমে পড়ে বাচ্চুর খোঁজে। কোথায় আছেন বাচ্চু—এ প্রশ্নের মুখে পড়েছেন দুদকের তদন্ত-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও। তবে ওই কর্মকর্তারাও সঠিকভাবে জানাতে পারেননি। অবশ্য সংস্থাটির গোয়েন্দা ইউনিট অল্প সময়ের মধ্যেই বাচ্চুর অবস্থান নিশ্চিত করেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের এক কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘১২ জুন চার্জশিট দেওয়ার পরপরই দুদক বাচ্চুর অবস্থান অনুসন্ধানে নেমে পড়ে। সে অনুযায়ী তাঁকে ট্রেস করতে সক্ষম হয় দুদক।’
সংস্থাটির আরেক কর্মকর্তা জানান, অনেকের ধারণা তিনি (শেখ আবদুল হাই বাচ্চু) দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। কিন্তু তিনি দেশেই আছেন।

দুদক সূত্র জানায়, সংস্থাটির কর্মকর্তারা বাচ্চুর অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হলেও তদন্তে বিঘ্ন ঘটার শঙ্কায় প্রকাশ্যে আসেনি। তবে শিগগিরই বাচ্চুকে গ্রেপ্তার করা হবে বলেও জানিয়েছে ওই সূত্র।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুদক সচিব মাহবুব হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এ ব্যাপারে এখনো আমি জানি না। তদন্ত কর্মকর্তারা বলতে পারবেন। কোর্ট (আদালত) কী আদেশ দিয়েছেন সেটা দেখে বলতে হবে।’

বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হয় শেখ আবদুল হাই বাচ্চুর মুঠোফোন নম্বরে। তবে সে নম্বরের কল ধরেন এক নারী। তিনি আজকের পত্রিকার কাছে নম্বরটি শেখ আবদুল হাই বাচ্চুর নয় বলে দাবি করেন। ওই নারী বলেন, আপনি ভুল নম্বরে কল দিয়েছেন। এটা মাদারীপুরে।

অবশ্য মুঠোফোনের ট্রুকলার অ্যাপের মাধ্যমে শনাক্ত করা যায় নম্বরটি বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুরই। ওই অ্যাপে দেখা যায় নম্বরটির পাশে ‘বেসিক চেয়ারম্যান শেখ’ নামটি লেখা রয়েছে।

এদিকে একটি সূত্র আজকের পত্রিকাকে জানিয়েছে, দুদক অভিযোগপত্র দেওয়ার আগে থেকেই দেশেই অবস্থান করছেন তিনি। ওই সূত্র আরও জানিয়েছে, বাচ্চু বেশ কিছুদিন যাবৎ শারীরিকভাবে অসুস্থ। নিরাপদ স্থানে তিনি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বিশ্রামের পাশাপাশি চিকিৎসা নিচ্ছেন।

এর আগে ১২ জুন ব্যাপক আলোচিত বেসিক ব্যাংকের টাকা আত্মসাতের ৫৯টি মামলায় অভিযোগপত্র দেয় দুদক। অনিয়মের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা সত্ত্বেও দীর্ঘ আট বছরের তদন্ত কার্যক্রমে বাচ্চুকে আসামি করতে পারেনি সংস্থাটি। তবে বর্তমান মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহর নেতৃত্বাধীন কমিশনের আমলে তদন্তে বেরিয়ে আসে ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যানের নাম। অভিযোগপত্রে বাচ্চুসহ ৪৬ ব্যাংক কর্মকর্তা ও ১০১ গ্রাহককে আসামি করা হয়।

দুদকের তথ্যমতে, দুদক ২০১৩ সালে বেসিক ব্যাংকের অভিযোগের অনুসন্ধান শুরু করে। দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে ২ হাজার ৩৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকা আত্মসাতের ঘটনায় ২০১৫ সালের ২১,২২ ও ২৩ সেপ্টেম্বর ৫৬টি মামলা দায়ের করা হয়। এসব মামলায় ১২০ জনকে আসামি করা হয়। পরে ২০১৯ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত আরও ৩টি মামলা দায়ের করা হয়। সব মিলিয়ে বেসিক ব্যাংক টাকা আত্মসাতের ঘটনায় ৫৯টি মামলা দায়ের করে দুদক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *