রাষ্ট্রদূতরা দায়িত্বের বাইরে কাজ করলে প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেবেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী

দায়িত্বের বাইরে কোনো কাজ করলে বিদেশি দূতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম এমপি। সোমবার সেগুনবাগিচায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে তিনি এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। ঢাকাস্থ জাপানের রাষ্ট্রদূত ইয়ামা কিমিনোরি রোববার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে যান। তার একদিন আগে রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রস্তুতির বিষয়ে জানতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সঙ্গে বৈঠক করেন। জাপানের রাষ্ট্রদূতের উদাহরণ টেনে বিদেশি দূতদের এমন তৎপরতার বিষয়ে প্রতিমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া চান এক সাংবাদিক। জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমার বিস্তারিত জানা নেই। আজকে থেকে ছয় মাস আগে এক বিশেষ পরিস্থিতিতে দূতদের সতর্ক করা হয়েছিল। যদি কোনো দেশের রাষ্ট্রদূত আবারও এ ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত হন, যেটা আমরা মনে করবো যে; তারা সীমা লঙ্ঘন করছেন, এটা আমলে নিয়ে অবশ্যই আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।

দিল্লিতে সংসদ ভবনে ‘অখণ্ড ভারত’- মানচিত্রের বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছে বাংলাদেশ: ভারতের সংসদ ভবনে ‘অখণ্ড ভারতের’ মানচিত্র স্থাপন করা হয়েছে। ওই মানচিত্রে বাংলাদেশসহ আরও কয়েকটি দেশকে দেখানো হয়েছে। এ বিষয়ে ভারতের আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা জানতে বাংলাদেশ দূতাবাসকে দিল্লির বিদেশ মন্ত্রকের সঙ্গে যোগাযোগের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম।

সোমবার বিকালে তিনি বলেন, এ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করার কোনো কারণ নেই। তারপরও বাড়তি ব্যাখ্যার জন্য আমরা দিল্লির মিশনকে বলেছি ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলতে, তাদের আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা কী তা জানার জন্য। প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা যেটা জেনেছি- ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন যে, এটি অশোকা সাম্রাজ্যের মানচিত্র, এটি খ্রিস্টের জন্মের তিনশত বছর আগের।

সেই সময়ের যে অঞ্চলটি ছিল, তার একটি মানচিত্র এবং এটি একটি ম্যুরাল। ওই ম্যুরালে চিত্রায়ণ করা হয়েছে মানুষের যাত্রা। এখানে সাংস্কৃতিক মিল থাকতে পারে, কিন্তু এর সঙ্গে রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই। সম্প্রতি ভারতের নতুন সংসদ ভবনে ম্যুরালের মাধ্যমে ‘অখণ্ড ভারতের’- এক মানচিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। সেই অখণ্ড ভারতের মধ্যে রয়েছে আফগানিস্তান, পাকিস্তান, নেপাল, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমার।
৬ কংগ্রেসম্যানের সঙ্গে কথা বলবে সরকার: ওদিকে বাংলাদেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের যে ছয় কংগ্রেসম্যান চিঠি দিয়েছে তাদের সঙ্গে সরকার কথা বলবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আমরা ওই কংগ্রেসম্যানদের সঙ্গে কথা বলবো। শুধু তাই না, এ অঞ্চল নিয়ে যাদের আগ্রহ আছে বা এ ধরনের বিষয়ে যাদের আগ্রহ আছে, তাদের সকলকেই নিয়মিতভাবে আমাদের অবস্থান জানাবো। গত ২৫শে মে ৬ জন রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যানের এক খোলা চিঠিতে শেখ হাসিনার সরকার সম্পর্কে বিভিন্ন নেতিবাচক মন্তব্য উল্লেখ করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে অনুরোধ করেন।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা চিঠিটি সংগ্রহ করেছি। অন্য যেকোনো চিঠির মতো এখানে কিছু বাড়তি বলা হয়েছে। এমনকি তথ্যের বড় ধরনের ঘাটতি আছে, অসামঞ্জস্য আছে। আমাদের দেশেও রাজনীতিবিদেরা, সংসদ সদস্যরা বিশেষ করে অন্য দলের সংসদ সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীকে অনেক কিছু বলেন। কেউ হয়তো লেখেনও। কিন্তু আমরা সেটি জানি না। হয়তো আমার বিরুদ্ধে বলেন বা লেখেন। এটি রাষ্ট্র বা সরকারের প্রধানের ওপর নির্ভর করে তিনি ওই চিঠি বা কথাগুলো বিবেচনায় নেবেন কি-না? প্রতিমন্ত্রী বলেন, এ রকম চিঠি অতীতেও এসেছে, ভবিষ্যতে আরও বড় আকারে আসতে পারে। নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে এই ধরনের কার্যক্রম তত বাড়তে থাকবে। বিদেশে সরকারের পক্ষে-বিপক্ষে বিভিন্ন লবিস্ট ফার্ম বা শক্তি কাজ করছে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, তারা তাদের কাজ করবে, আমরা আমাদের কাজ করবো।

প্রধানমন্ত্রী সবসময় বলেন- বাংলাদেশের মানুষ আমাদের শক্তি। প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিদেশে কারও কাছে ধরনা দিয়ে বা কারও চাপে পড়ে বা কারও সঙ্গে সম্পর্ক শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতেই হবে- এ রকম কোনো নীতির প্রতি অগ্রসর হয়ে বাংলাদেশের মানুষকে পেছনে ফেলে দেয়ার নীতিতে আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে না। প্রেসিডেন্টের কাছে মার্কিন ৬ কংগ্রেসম্যানের চিঠি বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে ফাটল ধরাতে পারবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই চিঠি যে অসামঞ্জস্য তা, আপনারা (গণমাধ্যমকর্মী) লাইন বাই লাইন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখতে পারেন। নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে চিঠিপত্র আসা বাড়বে- এমন আশঙ্কা করে তিনি বলেন, এসব চিঠির বিষয়ে আপনাদের (গণমাধ্যমকে) আরও বেশি যাচাই করে নিতে হবে।

সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে লেখা কংগ্রেসম্যানদের চিঠিতে বলা হয়, ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে তার সরকার কর্তৃক মানবাধিকার লঙ্ঘনের শত শত উদাহরণ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইট্স ওয়াচ, ফ্রিডম হাউস, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থা ও এনজিও তাদের প্রতিবেদনে নথিভুক্ত করেছে। যাতে দেখা যায়, শেখ হাসিনার সরকার ক্রমবর্ধমানভাবে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা অস্বীকার করেছে। তার নাগরিকদের ওপর নির্যাতন করেছে, বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, সাংবাদিকদের কারাগারে বন্দি করেছে, বিরোধীদের গুম করেছে এবং শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকারীদের লাঞ্ছিত করেছে বা হত্যা করেছে।

এ ঘটনা শুধু তার রাজনৈতিক বিরোধীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুরাও নিপীড়নের শিকার হয়েছে। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর থেকে বাংলাদেশে হিন্দু জনসংখ্যা অর্ধেক হয়ে গেছে। লুটপাট ও বাড়িঘর পোড়ানো, মন্দির ও ধর্মীয় মূর্তি ধ্বংস, হত্যা, ধর্ষণ এবং জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করার কারণে হিন্দুদের বাংলাদেশ থেকে পালাতে বাধ্য করা হয়েছে। বাংলাদেশের সংখ্যালঘু খ্রিষ্টান জনগোষ্ঠীও নিপীড়নের শিকার হয়েছে। চিঠিতে আরও বলা হয়, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে হাজার হাজার শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারী সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের জন্য বিক্ষোভ করেছে, যা হাসিনা সরকারের পরিবর্তনের জন্য জনগণের একমাত্র আশা।

এর জবাবে বাংলাদেশের র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের গ্রেপ্তার করেছে, এমনকি হত্যা করেছে। হিউম্যান রাইট্স ওয়াচসহ বেশকিছু এনজিও র‍্যাবকে একটি সরকারি ‘ডেথ স্কোয়াড’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। জার্মানির রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম ডয়চে ভেলে এবং সুইডেনভিত্তিক সংবাদ সংস্থা নেত্রা নিউজের সাম্প্রতিক তদন্তে বলা হয়েছে, র‍্যাব’র বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও বলপূর্বক গুমের এসব ঘটনা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন ছাড়া সম্ভব ছিল না। চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের একজন হলেন- মার্কিন কংগ্রেসম্যান বব গুড। গুড শুক্রবার তার নিজের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট এবং তার ভেরিফায়েড টুইট অ্যাকাউন্টে বাইডেনকে দেয়া চিঠিটি প্রকাশ করেছেন। চিঠিতে গুড ছাড়াও কংগ্রেসম্যান স্কট পেরি, ব্যারি মুর, টিম বারচেট, ওয়ারেন ডেভিডসন এবং কিথ সেল্ফের স্বাক্ষর রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *