গলায় ফাঁস লাগিয়ে নির্বাচনে নিয়েছে আওয়ামী লীগ : জিএম কাদের

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানিয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, জাপার গলায় ফাঁস লাগিয়ে ২০২৪ সালের নির্বাচনে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। আমরা নির্বাচনে না গেলেও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হতো।
রোববার (১ সেপ্টেম্বর) বনানীর দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

দুর্নীতি ও দুঃশাসনের জন্য আওয়ামী লীগের পতন হয়েছে মন্তব্য করে সাবেক এই বিরোধী দলের নেতা বলেন, সর্বশেষ সংসদ নির্বাচনে কোনো আসনে সরকার কোনো হস্তক্ষেপ করেনি। যেমন আমার নির্বাচনী এলাকায়। কোথাও কোথাও সরকারের নির্দেশনা ছিল; যে যেভাবে পার জিতে আস। সেখানে কালো টাকা বা পেশিশক্তি কোনো বিষয় ছিল না। তৃতীয় নির্দেশনা ছিল- নির্বাচনে যে যাই করুক তাদের তালিকা অনুযায়ী বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। নির্বাচনের পর বক্তৃতা ও প্রবন্ধে আমরা প্রমাণ করেছি, ওই সময়ে কোনোভাবেই এত ভোট কাউন্ট হওয়া অসম্ভব।

তিনি বলেন, আমাদের দলের রাজনীতি করতে দেয়নি স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ। ২০১৪ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আমরা এই দলটির হাতে নির্যাতিত হয়েছি। তাই ২০২৪ সালের নির্বাচনে না যাওয়া ছাড়া আমাদের সামনে আর কোনো অপশন ছিল না। আমাদের দল হয়তো কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, কিন্তু দলটি বেঁচে গেছে। দল না থাকলে আমাদের রাজনীতি থাকবে না। তাই, দল বাঁচানো আমাদের কাছে জরুরি ছিল। নির্বাচনের দিন ও নির্বাচনের পরেও আমরা বলেছি, নির্বাচন সঠিক হয়নি।

এক প্রশ্নের জবাবে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনে আমরা অংশ নেইনি। ৩০০ প্রার্থীর মধ্যে ২৭০ জন প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছে। আমি সরকারের মন্ত্রী থেকেও নির্বাচন বর্জন করেছিলাম। বিএনপির দায়ের করা একটি মামলা ব্যবহার করে আওয়ামী লীগ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে নির্বাচনে যেতে বাধ্য করেছে। আমার ভাবীকে (রওশন এরশাদ) দিয়ে সরকার দলে বিভাজন সৃষ্টি করেছিল। জাতীয় পার্টির সব সিদ্ধান্ত অমান্য করে তিনি দলকে নির্বাচনে নিয়েছেন। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নির্দেশ অনুযায়ী আমি সংবাদ সম্মেলন করে ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জনের কথা জানিয়ে সদ্য বিদায়ী এই বিরোধী দলের নেতা বলেন, মামলা দিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি জাতীয় পার্টিকে নির্যাতন করেছে।

মঞ্জুর হত্যা মামলা দিয়ে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে ফাঁসির ভয় দেখানো হয়েছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপিসহ সব দলই অংশ নিয়েছিল। আমরাও নির্বাচনে ছিলাম। ২০২৪ সালের নির্বাচন থেকে আমরা বারবার চলে আসতে চেষ্টা করেছি। সংসদে এবং সংসদের বাইরে আমরা এসব কথা বলেছি। আমাদের দল ও সংসদীয় দলকে সবসময় আওয়ামী লীগ ডিস্টার্ব করেছে। ২০২৪ সালের নির্বাচন বর্জনের জন্য সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু সরকারের বিভিন্ন সংস্থা আমাদের সেই সংবাদ সম্মেলনে অংশ নিতে দেয়নি। মূল জাতীয় পার্টি সবসময় জনগণের সঙ্গে ছিল, জনগণের সঙ্গে থাকবে।

বর্তমান রাজনৈতিক মামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অনেক বেশি মামলা হচ্ছে। এত বেশি মামলা হলে প্রকৃত দোষীরা পার পেয়ে যাবে। শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করা হোক এই দাবি আমি আগেই করেছি, যা দেশি ও বিদেশি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ পরিবারগুলোকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, যারা শহীদ হয়েছে তাদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন করতে হবে। যারা আহত হয়েছেন তাদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে এবং ভবিষ্যতে তারা যেন হারিয়ে না যায়, সে জন্য রাষ্ট্রকে ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রশাসনকে দলীয়করণমুক্ত করতে হবে।

প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার করতে হবে। ট্রুথ কমিশন গঠনের মধ্য দিয়ে স্বীকৃত দুর্নীতিবাজদের অর্থ সরকারি কোষাগারে ফেরত দেওয়ার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা চাই, সরকার রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় সংস্কার করে নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করা হবে। সাধারণ মানুষের ধারণা, নির্বাচিত সরকারের চেয়ে অনির্বাচিত সরকার বেশি সুশাসন দিতে পারে। আমরা মনে করি, দ্রুত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে হবে। পুলিশের ভয়-ভীতি দূর করে তাদের মাধ্যমে মানুষের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের যদি পেটের ভাত ও জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয় তাহলে তারা নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সময় দিতে রাজি আছে। সরকার যেভাবে চাইবে আমরা সংস্কারের জন্য সহায়তা দিতে প্রস্তুত আছে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টি মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু, প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আব্দুস সবুর আসুদ, অ্যাড. মো. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, মোস্তফা আল মাহমুদ, মনিরুল ইসলাম মিলন, মাসরুর মওলা, জসীম উদ্দিন ভূঁইয়া, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মো. খলিলুর রহমান খলিল, মেজর (অব.) সিকদার আনিসুর রহমান, সৈয়দ মঞ্জুর হোসেন মঞ্জু, ভাইস চেয়ারম্যান আহাদ ইউ চৌধুরী শাহীন, যুগ্মমহাসচিব শামীম আহমেদ রিজভী, সাংগঠনিক সম্পাদক নির্মল দাশ, হেলাল উদ্দিন, শাহজাহান মানসুর, হুমায়ুন খান, প্রচার সম্পাদক মাসুদুর রহমান মাসুম, যুগ্ম সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য এমএ সুবহান, এমএ হান্নান, মাহমুদ আলম, সমরেশ মণ্ডল মানিক প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *