এক মন্তব্যে কেঁপে উঠলো পুরো বরিশাল। ‘নৌকাকে হারাতে হাতপাখার প্রার্থী মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করীমকে ৩ কোটি টাকা উৎকোচ দিয়েছেন বর্তমান মেয়র হাসানাত তনয় সাদিক আব্দুল্লাহ’। অভিযোগটি করেছেন ২৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী, বর্তমান কাউন্সিলর শরীফ আনিচুর রহমান। তাও কথায় কথায় নয়, খোদ সংবাদ সম্মেলন ডেকে তিনি এই অভিযোগ করেছেন। রোববার বিকালে তার নির্বাচনী কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন তিনি।
২০১৮ সালের বিসিসি নির্বাচন থেকেই আলোচনায় ছিলেন ২৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শরীফ আনিচুর রহমান। নির্বাচনের পরপরই যে ১০ কাউন্সিলর সাদিকের বিপক্ষে অবস্থান নেন তাদের মধ্যে তিনি ছিলেন একজন। নগরীতে গুঞ্জন রয়েছে, আনিচুরকে একবার রেগে মেয়র চড় মেরেছিলেন। তবে গত ৫টি বছর তিনি যেভাবে পেরেছেন কাউন্সিলর থাকা অবস্থায় মেয়রের বিরুদ্ধাচরণ করে গেছেন। মহানগর আওয়ামী লীগের সক্রিয় এই সদস্য পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর অনুসারী। সেই আনিচ রোববার সংবাদ সম্মেলন করে বোমা ফাটালেন।
তার নির্বাচনী এলাকায় সাদিকপন্থি প্রার্থীর বিরুদ্ধে হামলা ও ভয়ভীতির অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন করেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘নৌকার প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাতকে পরাজিত করতে হাতপাখার প্রার্থীকে তিন কোটি টাকা উৎকোচ দেয়া হয়েছে’।
তিনি বলেন, ‘নৌকার মনোনয়ন থেকে বাদ পড়ায় সাদিক আবদুল্লাহ ও তার পিতা হাসানাত আবদুল্লাহ ঢাকায় ডেকে নিয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাতপাখার প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীমকে তিন কোটি টাকা দিয়েছেন। যাতে শেখ হাসিনার মনোনীত প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাত পরাজিত হন। আর খোকন সেরনিয়াবাত পরাজিত হলে সাদিক আবদুল্লাহ পুনরায় বরিশালে সব অপকর্ম নির্বিঘ্নে করতে পারবে বলে চিন্তা করছে। সাদিক আবদুল্লাহর আমলে নির্যাতিত ১০ কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে তিন জন করে প্রার্থী দাঁড় করানো হয়েছে। যাদের ইতিমধ্যে ৩০ লাখ টাকা দেয়াও হয়েছে’ বলে অভিযোগ করেন আনিচ। মুহূর্তের মধ্যে পুরো বরিশালে ‘টক অব দ্য টাউনে’ পরিণত হয় তার অভিযোগটি। এরপর মধ্যরাতেই মহানগর আওয়ামী লীগের জরুরি সভায় শরীফ আনিচুর রহমানকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। রাত ১টার দিকে পত্রিকা অফিসগুলোতে দপ্তর সম্পাদক হেমায়েতউদ্দিন সেরনিয়াবাত সুমন স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তার বহিষ্কারের তথ্যটি জানানো হয়। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তার মিথ্যাচার এবং সংগঠনবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ এনে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে জানানো হয়।
বক্তব্যটি নিয়ে হাতপাখার সমর্থকদের মধ্যেও এ নিয়ে চলছে আলোচনা সমালোচনা। এ বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যাচার বলে তাদের দাবি। মেয়র প্রার্থী সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম বলেন, ‘এটি ষড়যন্ত্রের ফাঁদ হতে পারে। এ ফাঁদে আমরা পা দেবো না।’
বহিষ্কারের বিষয়ে জানতে চাইলে শরীফ মো. আনিচুর রহমান মিডিয়াকে বলেন, ‘আমি সত্য বলায় আমাকে দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। আমরা যে ১০ জন কাউন্সিলর মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর পক্ষ ত্যাগ করেছিলাম, সেই ১০টি ওয়ার্ডেই আওয়ামী লীগের প্রার্থী করা হয়েছে আমাদের জব্দ করার জন্য। সত্য প্রকাশ করাতেই আমাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কারে তার কিছুই আসে যায় না বলেও তিনি মন্তব্য করেন।’