আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার দল নির্বাচনে ‘ভোট চুরির’ সাথে জড়িত নয়।
তিনি বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি তাদের ‘নমিনেশন বাণিজ্যের’ কারণে নির্বাচনে জিততে না পেরে আওয়ামী লীগের উপর উপর দায় চাপিয়েছে।“আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দেয়া হয়। আমরা ভোট চুরি করতে যাব কেন? জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে আমাদের ভোট দেয়,” বলেন শেখ হাসিনা।
দুই হাজার আঠারো সালের নির্বাচনের প্রসঙ্গ এনে শেখ হাসিনা বলেন, “বিএনপি জিতবে কীভাবে? .. এক সিটে যদি তিনজন করে নমিনেশন দেয়, ফখরুল একজনকে নমিনেশন দেয়, রিজভী আরেকজনকে দেয় আর লন্ডনে থেকে তারেক দেয় আরেকজনকে।”
“যে যত টাকা পায় সে ততটা নমিনেশন দেয়। সেখানে হলো টাকার খেলা। তারপর নির্বাচন থেকে শেষে সরে দাঁড়িয়ে বলে আমাদের নির্বাচন করতে দিল না,” বলেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এক শ্রেণীর বুদ্ধিজীবী সবকিছু ভুলে গিয়ে বিএনপিকে ক্ষমতায় আনতে চায়।
“আমাদের অনেক জ্ঞানী-গুণী বিএনপির সাথে হাত মেলায়, অনেক তত্ত্বকথা শোনায়, গণতন্ত্রের ছবক দেয়, গণতন্ত্র উদ্ধার করতে চায়। ”
“তারা আসলে বুদ্ধিজীবী না, তারা আসলে বুদ্ধি প্রতিবন্ধীজীবী”
সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় থাকার নির্দেশ
শেখ হাসিনা বলেন, রাজনৈতিক বিরোধীরা সোশ্যাল মিডিয়াকে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কাজে লাগাচ্ছে। এজন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ছাত্রলীগের কর্মীদের সক্রিয় থাকার আহবান জানান শেখ হাসিনা।
“সোশ্যাল মিডিয়া ভরে গেছে আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বলবো, এর উপযুক্ত জবাব সবাইকে দিতে হবে। ”
“জবাব দেয়া বেশি কিছু না। ওরা যখন আমাদের বিরুদ্ধে লেখে তার জবাব দেয়া লাগবে না। ওদের অপকর্মটা যদি সেখানে কমেন্টে ছেড়ে দেয়া যায়, তাহলে ওরা ওটা বন্ধ করে দেবে। এটাই হচ্ছে সব থেকে ভালো।”
“ওরা ক্ষমতায় থাকতে কী করেছে? – তাদের অগ্নি সন্ত্রাস, তাদের খুন, তারা কাকে কাকে মেরেছে, ভোট চুরি, ডাকাতি – এগুলো তুলে দিলেই তো যথেষ্ট”।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশের ব্যাংকিং পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এবং অর্থমন্ত্রীর সাথে কথা বলেছেন।
“আল্লাহর রহমতে আমাদের কোন সমস্যা নাই। প্রতিটা ব্যাংকেই টাকা আছে। কাজেই আমি বলবো, গুজবে কেউ কান দেবেন না।”
শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের সম্মেলনে এমন এক সময়ে এসব বক্তব্য রাখলেন যখন বাংলাদেশের রাজনীতিতে আগামী ১০ই ডিসেম্বর বিএনপির সমাবেশ নিয়ে বেশ উত্তাপ তৈরি হয়েছে।
বিএনপিকে সমাবেশ করার জন্য পুলিশের তরফ থেকে ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে অনুমতি দেয়া হয়েছে।
সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন জায়গায় সমাবেশ থেকে বিএনপির তরফ থেকে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি তোলা হয়েছে।
বিএনপি বলছে শেখ হাসিনার অধীনে তারা কোন নির্বাচনে যাবে না।
আওয়ামী লীগ কখনো পালায় না : প্রধানমন্ত্রী
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ কখনো পালায় না, জনগণকে নিয়ে কাজ করে।
রোববার (২৯ জানুয়ারি) দুপুরে রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা ময়দানে আয়োজিত জনসভায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজশাহী নগরী ও জেলা ইউনিট এ জনসভার আয়োজন করছে।
শেখ হাসিনা বলেন, জিয়াউর রহমান বাধা দিয়েছিল আমাকে দেশে আসতে দেবে না। আমি বাধা অতিক্রম করেই দেশে ফিরেছিলাম। আবার ২০০৭ সালে যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসে, তখনো আমি বিদেশে গিয়েছিলাম, আমার ছেলের বউ অসুস্থ ছিল। আমাকে দেশে ফিরতে দেবে না। আমি জোর করে দেশে ফিরে এসেছিলাম। আমার বিরুদ্ধে মার্ডার কেস দেওয়া হয়েছিল। আমি বলেছি, আমি যাব। এই কেস আমি মোকাবিলা করবো। আমি দেশে ফিরে এসেছি শুধু বাংলার মানুষের কথা চিন্তা করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে যারা বলে পালানোর সুযোগ পাবে না আওয়ামী লীগ। আমি স্পষ্ট বলতে চাই, আওয়ামী লীগ পালায় না। পালান আপনাদের নেতারা। বিএনপি নাকি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করবে। কাকে নিয়ে? দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত তাদের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। যে নাকি ২০০৭-এ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে স্ট্যাম্পে মুচলেকা দিয়েছিল, আর কোনো দিন রাজনীতি করবে না বলে দেশ থেকে পালিয়ে গিয়েছিল, সে কথা কি আমাদের বিএনপি নেতাদের মনে নাই?’ প্রশ্ন রাখেন শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ৪০ কোটি টাকা আমরা দেশে নিয়ে এসেছি তাদের পাচার করা টাকা। এর জবাব কি তারেক দিতে পারবে? আওয়ামী লীগ কখনো পালায় না। আওয়ামী লীগ জনগণকে নিয়ে কাজ করে। এটা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া সংগঠন। এই সংগঠন যখনই ক্ষমতায় থেকেছে, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে। আজকে বাংলাদেশে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ। ৪০ ভাগ যেখানে দারিদ্র্যসীমা, আমরা ২০ ভাগে নামিয়েছি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা জনগণের কল্যাণে কাজ করি। এই রাজশাহীর অবস্থা কী ছিল আপনারা একবার চিন্তা করে দেখেন। ২০০১ সালের কথা চিন্তা করেন, বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায়, প্রতিনিয়ত হত্যা-জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, নারী ধর্ষণ, নির্যাতন; এই রাজশাহীতে মহিমা, রাজুফা…কীভাবে তাদের ওপর পাশসিক অত্যাচার করেছে ওই বিএনপির ক্যাডার বাহিনী, জামায়াত জোট! একটা বাচ্চা মেয়েকে গ্যাং রেইপ করা হলো, তার বাবা-মা নৌকায় ভোট দিয়েছিল সেই কারণে। নৌকায় ভোট না দিলে দেশ স্বাধীন না হতো না। দেশ স্বাধীন না হলে তোদের নেতা জিয়াউর রহমান মেজর থেকে মেজর জেনারেল পদে প্রমোশন পেত না। এটা তারা ভুলে যায়। আর দেশ স্বাধীন না হলে কোনো দিন ক্ষমতায় আসতে পারতো না খালেদা জিয়া, প্রধানমন্ত্রীও হতে পারতো না। সেই নৌকার ওপর এত রাগ কেন!’
‘নৌকায় ভোট দিয়েছে বলে খাদ্যে নিরাপত্তা পেয়েছে। ১ দিনে ১০০ সেতু, ১ দিনে ১০০ সড়ক কোন সরকার করতে পেরেছে? আওয়ামী লীগ সরকার, নৌকা মার্কার সরকার। সেই করতে পারে, আর কেউ করতে পারে না,’ বলেন শেখ হাসিনা। ###