নিঃশর্তভাবে ঢাকার পাশে থাকবো, তিস্তা ও মোংলা বন্দর প্রকল্পে দ্রুত কাজ শুরু হবে: চীনের রাষ্ট্রদূত

তিস্তা নদীর ব্যবস্থাপনা ও পুনরুদ্ধার প্রকল্পে চীনের সম্পৃক্ততা বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন সহযোগিতার বিষয় হয়ে উঠেছে। চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন সম্প্রতি স্পষ্ট করেছেন যে বাংলাদেশ সরকারের চূড়ান্ত সম্মতি পেলেই তারা এই প্রকল্পে কাজ শুরু করতে প্রস্তুত।

 

এই প্রকল্পে তিস্তা নদীর ১১৫ কিলোমিটার অংশে ব্যাপক খননকাজ, নদীর গভীরতা বৃদ্ধি, দুই তীরে সড়ক নির্মাণ এবং একটি বহুমুখী ব্যারেজ নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। চীন এই প্রকল্পকে তাদের বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগের অংশ হিসেবে দেখছে এবং আনুমানিক ৮ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের কৃষি, বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

তবে এই প্রকল্প নিয়ে ভারতের তীব্র আপত্তি রয়েছে, যা একটি জটিল ভূ-রাজনৈতিক ইস্যু তৈরি করেছে। ভারতের প্রধান উদ্বেগ হলো এই প্রকল্পের মাধ্যমে চীনের উপস্থিতি বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের অত্যন্ত কাছাকাছি বৃদ্ধি পাবে, যা শিলিগুড়ি করিডরের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখা হচ্ছে। এছাড়া তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে অমীমাংসিত বিরোধ রয়েছে। ২০১১ সালে একটি চুক্তি স্বাক্ষরের কথা থাকলেও পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতার কারণে তা বাস্তবায়িত হয়নি। এই প্রেক্ষাপটে তিস্তা প্রকল্পে চীনের সম্পৃক্ততা ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের উপর প্রভাব ফেলতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

বাংলাদেশ সরকার এই প্রকল্পকে জাতীয় স্বার্থে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করছে। তবে বাংলাদেশকে এই বিষয়ে সতর্কতার সাথে এগোতে হচ্ছে, যাতে আঞ্চলিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোনো নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, তিস্তা প্রকল্প বাংলাদেশের নিজস্ব উন্নয়ন প্রকল্প এবং চীন এখানে শুধু অর্থায়নের প্রস্তাব দিয়েছে। প্রকল্পটি সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে উত্তরাঞ্চলের প্রায় দুই কোটি মানুষের জীবনমান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে, তবে এর জন্য প্রয়োজন সুষ্ঠু পরিকল্পনা এবং সকল পক্ষের মধ্যে সমন্বয়। বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জ হলো কিভাবে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করা যায়, পাশাপাশি আঞ্চলিক সম্পর্কের ভারসাম্যও বজায় রাখা যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *