নিঃশব্দে পরিশ্রম করে যাওয়া যকৃত আপনার শরীরের অন্যতম প্রধান ফিল্টার। শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ ছেঁকে ফেলার কাজটিই সে করে প্রতিনিয়ত। তাই তাকে একটু বাড়তি যত্ন না দিলে কি চলে? নানা গবেষণা বলছে, কিছু নির্দিষ্ট খাবার নিয়মিত খেলে যকৃত আরও সুস্থ ও সচল থাকে।
বিশেষত, চিনের এক গবেষণায় দেখা গেছে, সপ্তাহে অন্তত চারবার বাদাম খেলে নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ (NAFLD)-এর ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়। আবার কাঁচা রসুন নিয়মিত খাওয়ার অভ্যাস থাকলে লিভার ক্যানসারের ঝুঁকি কমে,বিশেষ করে যাঁদের হেপাটাইটিস বি নেই, তাঁদের জন্য এটি আরও কার্যকর। এছাড়া নিয়মিত গ্রিন টি খাওয়ার সঙ্গে লিভার এনজাইমের মাত্রা কমার সম্পর্ক পাওয়া গেছে, যা স্বাস্থ্যকর লিভার ফাংশনের ইঙ্গিত দেয়।
যদি আপনি চান যকৃতের প্রতি একটু ভালোবাসা জানাতে, তবে আপনার দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় এই ৭টি খাবার রাখা শুরু করতে পারেন:
১. শাকসবজি: যকৃতের প্রাকৃতিক ক্লিনার!
পাতা-ওয়ালা শাক যেমন পালং, কলি, আরাগুলা শুধু প্লেট রঙিন করে না, বরং ভরপুর পুষ্টি দিয়েও যকৃতকে সাহায্য করে। এগুলো দেহের বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে যকৃতের ডিটক্স ক্ষমতা বাড়ায় এবং পাচনক্রিয়ায় সহায়ক। এছাড়া এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরকে রক্ষা করে বিভিন্ন ক্ষতিকর প্রভাব থেকে। সালাদে মেশান, স্মুদি বানান বা হালকা রসুন দিয়ে ভেজে খেয়ে ফেলুন যেভাবেই খান, যকৃত খুশি!
২. বিটরুট: রঙে গাঢ়, গুণে দুর্দান্ত
চমৎকার এক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিটরুটে রয়েছে ‘বেটালেইন’ নামক উপাদান, যা প্রদাহ কমাতে ও শরীরকে ডিটক্সে সাহায্য করে। এছাড়া এটি রক্তপ্রবাহ উন্নত করে, যার ফলে যকৃত আরও ভালোভাবে কাজ করতে পারে। সালাদে কাঁচা, রোস্ট করে বা স্মুদিতে মিশিয়ে বিভিন্নভাবে খেতে পারেন।
৩. অ্যাভোকাডো: সুস্বাদু ও যকৃতবান্ধব
অ্যাভোকাডোতে রয়েছে স্বাস্থ্যকর চর্বি যা যকৃতের প্রদাহ কমিয়ে তাকে নিজেকে সারিয়ে তোলার সুযোগ দেয়। এর মধ্যে থাকা ‘গ্লুটাথায়ন’ নামক উপাদান যকৃতের বিষাক্ততা দূর করতে কার্যকর। ব্রেডে লাগিয়ে, সালাদে মিশিয়ে বা স্মুদিতেই যেভাবে খুশি উপভোগ করুন।
৪. রসুন: স্বাদের পাশাপাশি স্বাস্থ্যও
রসুনের মধ্যে থাকা সালফার যৌগ যকৃতের এনজাইম অ্যাকটিভ করে, যা শরীর থেকে টক্সিন বের করে দেয়। পাশাপাশি এর অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপকারিতা যকৃতের ওপর চাপ কমাতে সাহায্য করে। রোস্ট, কারি, পাস্তা বা যে কোনো রান্নায় রসুন যোগ করে দেখুন স্বাদ যেমন বাড়বে, তেমনি যকৃতও পাবে সুরক্ষা।
৫. গ্রিন টি: প্রতিদিনের এক কাপ প্রশান্তি
গ্রিন টিতে রয়েছে ‘ক্যাটেকিন’ নামক শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা যকৃতের কোষগুলোকে রক্ষা করে এবং তার প্রাকৃতিক পরিশোধন প্রক্রিয়াকে সহায়তা করে। এছাড়া এটি চর্বি বিপাকেও সাহায্য করে, যার ফলে ফ্যাটি লিভার ডিজিজের ঝুঁকি কমে। এক বা দুই কাপ গ্রিন টি প্রতিদিনের অভ্যাসে আনুন স্বাস্থ্যের জন্য।
৬. হলুদ: সোনালি রঙে যকৃতের যত্ন
হলুদের প্রধান উপাদান ‘কারকিউমিন’ যকৃতের কোষগুলো রক্ষা করে এবং শরীর থেকে ক্ষতিকর পদার্থ বের করে দিতে সহায়তা করে। এটি পাচনে গুরুত্বপূর্ণ পিত্তরস উৎপাদনেও সাহায্য করে। ঝালমশলার রান্নায়, স্যুপে, কিংবা এক গ্লাস গরম দুধে মিশিয়ে হলুদ খান নিয়মিত, যকৃত বলবে ধন্যবাদ!
৭. আখরোট: ছোট্ট এক মুঠো উপকারের ভাণ্ডার
আখরোটে রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা যকৃতের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া এতে থাকা অ্যামিনো অ্যাসিড যকৃতের কোষ মেরামতে সহায়তা করে। হাতের কাছে রেখে দিন, স্ন্যাক হিসেবে খান বা সালাদ-ওটমিলে ছড়িয়ে নিন যেভাবেই খান, যকৃত থাকবে চনমনে।
আপনার যকৃত সারাদিন কাজ করে আপনার শরীরকে সুস্থ রাখতে তাকে একটু ভালোবাসা জানান খাবারের মাধ্যমে। আজ থেকেই শুরু হোক সচেতন যত্ন!
সূত্র:https://tinyurl.com/595vfkpp